খোলা সয়াবিন বিক্রির সময় আরও ৬ মাস বাড়ল
আগামী ছয় মাস পর বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
চাহিদার শতভাগ সয়াবিন তেল প্যাকেটজাত করে বিপণনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না থাকায় বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির সময় ছয় মাস বাড়ানো হচ্ছে।
তবে আগামী ছয় মাস পর বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খোলা সয়াবিন তেল বিপণন ও বিক্রয় বন্ধের বিষয়ে সোমবার সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধের বিষয়ে তারা একমত। কিন্তু ব্যবসায়ীদের যে সক্ষমতা রয়েছে, তাতে শতভাগ ভোজ্যতেল প্যাকেটজাত করে বিপণনের ক্ষেত্রে তারা প্রস্তুত নন। সে জন্য তারা সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরও সময় দাবি করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আমরা সবার সমন্বয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে সম্পূর্ণরূপে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করতে চাই।”
“ব্যবসায়ীরা খোলাবাজারে ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধের জন্য আরও সময় চান। ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, শতভাগ প্যাকেটিং করার জন্য এখনও তারা পুরোপুরি প্রস্তুত নন। তবে ৬ মাসের মধ্যে খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।”
তিনি বলেন, “২০১৩ সালের আইনে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের আইনে ভোজ্যতেল প্যাকেট বা বোতলজাত করার বিধান রাখা হয়েছে। এর জন্য গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারিত ছিল। এ সময়ের মধ্যে ভোজ্যতেল প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান শতভাগ বোতলজাত ও প্যাকেটজাত করতে পারেনি।”
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের কারণ জানিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “খোলা সয়াবিন তেলে ভেজাল দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাম তেল সয়াবিন বলে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতারা কেজিতে ২০ টাকার ওপরে দাম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, প্রতারিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় আইনটি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।”
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধে এর আগেও একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, “খোলা তেলের ড্রামগুলো বেশিরভাগই কেমিক্যালের ড্রাম। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে। এসব ড্রামে তেলাপোকা, ইঁদুর পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য পাম ও সয়াবিন তেল বোতলজাত করতে হবে। কেননা ইতোপূর্বে তিনবার এ ব্যাপারে তারিখ পেছানো হয়েছে।”
গত ৩১ জুলাই সয়াবিন পুরোপুরি বোতলজাত করার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল।
তবে ‘শতভাগ বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারজাত করতে আরও সময় লাগবে’ উল্লেখ করে সভায় সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, “খোলা সয়াবিন তেল বাজারজাত করা এখনই বন্ধ করা সম্ভব নয়। এতে বাজারে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করে ফেলবে। কেউ কেউ বাকি থাকলে সেটি আলোচনা করে সমাধান করা হবে।”
সভায় মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান আরও বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের সময় চাওয়ার বিষয়টি বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে জানাব। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি যে, সাত দিনের মধ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা দিতে হবে। যাতে উল্লেখ থাকবে, কতদিনের মধ্যে কী কী পদক্ষেপ কোম্পানিগুলো নেবে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা, এস আলম গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার কাজী সালাহ উদ্দীন আহমেদ, রূপচাঁদার জেনারেল ম্যানেজার রবিউল ইসলাম, বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক মনির হোসেন প্রমুখ।
কমেন্ট