পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসাল ভারত
বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারত সীমান্তে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
চালের মতো পেঁয়াজ রপ্তানিও বন্ধ করে দিতে পারে-এমন খবরের মধ্যে ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল থাকবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃত করে এর আগে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছিল, আগামী সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ রুপিতে উঠতে পারে। বাসাবাড়িতে যে ধরনের পেঁয়াজ সাধারণত ব্যবহার করা হয়, সেই পেঁয়াজের দামই বাড়তে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।”
এর আগে সরকার সরবরাহ বাড়াতে নিজস্ব মজুত থেকে তিন লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়।
ভারতে পেঁয়াজের ভালো মজুত আছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিক গরম থাকার কারণে বড় পরিমাণ পেঁয়াজের মান নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
ওই ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বাড়তি। এই কারণেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত।
শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানায়, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়াতে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে বাড়তি এ শুল্ক আরোপের পথে হাঁটল প্রতিবেশী দেশটি।
রয়টার্স লিখেছে, দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ, টমেটোসহ বেশি ব্যবহার হয় এমন প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়ছে। গত কয়েক মাসে এসব সবজির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
গত জুলাইতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
অগাস্টের বড় সময়জুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে দেশটিতে। সবজি উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে দাম বাড়ছে সব ধরনের সবজির।
অন্যদিকে ভালো মানের পেঁয়াজ হয় এমন কিছু এলাকায় জুলাইয়ে বন্যার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে রান্নার নিত্য ব্যবহারের এ পণ্য বলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।
অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে।
তবে নিজেদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখাই শুল্ক বাড়ানোর কারণ বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে বলেছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন, সে দেশের ভেলেরো সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এবং সেগুলোর জাতও ভালো। এবার ওই এলাকায় বন্যা হওয়ায় তাদের পেঁয়াজের মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে।
নিজ দেশের সংকট এড়াতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে বলেও সেসময় দেশটির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানতে পারার কথা জানিয়েছিলেনবাংলাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সরবরাহ সংকটে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় মৌসুম শেষ না হতেই। লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েক দিনের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দামে সেঞ্চুরি হয়।
তখন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৪ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।
ভারত থেকে তখন পেঁয়াজ আসা শুরু হল দাম পড়তে থাকে। তবে গত সপ্তাহ থেকে আমদানিতে গতি কমলে আবার দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।
দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম ফের বেড়ে ৮০/৮৫ টাকায় উঠেছে। আমদানি করা পেঁয়াজ উঠেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
কমেন্ট