‘ভারতের শুল্ক আরোপে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না’

‘ভারতের শুল্ক আরোপে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছে এখনও তুলনামূলকভাবে প্রচুর পেঁয়াজের মজুত আছে। কাজেই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না।”

পাশের দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও বাংলাদেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। 

তিনি বলেছেন, “এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এর মধ্যে দেশে এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন। এর অর্থ হলো দেশেও পেঁয়াজ আছে।"

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছে এখনও তুলনামূলকভাবে প্রচুর পেঁয়াজের মজুত আছে। কাজেই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না।” 

রোববার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) মিলনায়তনে দেশে প্রথমবারের মতো বিটি তুলার দুটি জাতের অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান। 

চালের মতো পেঁয়াজ রপ্তানিও বন্ধ করে দিতে পারে-এমন খবরের মধ্যে ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত শনিবার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক শনিবার থেকেই কার্যকর হবে বলে ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।  

চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল থাকবে।  

ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃত করে এর আগে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছিল, আগামী সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ রুপিতে উঠতে পারে। বাসাবাড়িতে যে ধরনের পেঁয়াজ সাধারণত ব্যবহার করা হয়, সেই পেঁয়াজের দামই বাড়তে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।  

ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।”  

এর আগে সরকার সরবরাহ বাড়াতে নিজস্ব মজুত থেকে তিন লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

ভারতে পেঁয়াজের ভালো মজুত আছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিক গরম থাকার কারণে বড় পরিমাণ পেঁয়াজের মান নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।  

ওই ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে অন্যান্য সবজির দামও বাড়তি। এই কারণেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।  

অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত।  

রয়টার্স জানায়, দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ, টমেটোসহ বেশি ব্যবহার হয় এমন প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়ছে। গত কয়েক মাসে এসব সবজির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। 

গত জুলাইতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের মাসে এ হার ছিল ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ।  

অগাস্টের বড় সময়জুড়ে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে দেশটিতে। সবজি উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ছে। এতে দাম বাড়ছে সব ধরনের সবজির।  

অন্যদিকে ভালো মানের পেঁয়াজ হয় এমন কিছু এলাকায় জুলাইয়ে বন্যার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে রান্নার নিত্য ব্যবহারের এ পণ্য বলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।  

অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে।  

তবে নিজেদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখাই শুল্ক বাড়ানোর কারণ বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।    

বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহে বলেছেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন, সে দেশের ভেলেরো সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এবং সেগুলোর জাতও ভালো। এবার ওই এলাকায় বন্যা হওয়ায় তাদের পেঁয়াজের মজুদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে।  

নিজ দেশের সংকট এড়াতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে বলেও সেসময় দেশটির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানতে পারার কথা জানিয়েছিলেনবাংলাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।  

সরবরাহ সংকটে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় মৌসুম শেষ না হতেই। লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েক দিনের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দামে সেঞ্চুরি হয়।

  

তখন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৪ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।  

ভারত থেকে তখন পেঁয়াজ আসা শুরু হলে দাম পড়তে থাকে। তবে গত সপ্তাহ থেকে আমদানিতে গতি কমলে আবার দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে।  

দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।  

গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম ফের বেড়ে ৮০/৮৫ টাকায় উঠেছে। আমদানি করা পেঁয়াজ উঠেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। 

এদিকে ভারত থেকে এখনো বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেননি ব্যবসায়ীরা। তারপরও কেবল শুল্ক আরোপের খবর শুনেই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪৬ থেকে ৫০ টাকা। রোববার বিক্রি হয়েছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা।

রাজধানী ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। 

জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন গোডাউনে পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। একই কারণে বাজারে কয়েকদিন গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়তির দিকে।

 

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভারতের শুল্ক আরোপের ঘোষণাতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। 

“আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দামের পণ্য দেশে আসার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন তারা। আবার কোনো সময় দাম কমলেও পণ্য এখনো আসেনি বলে দাম কমাতে চান না।” 

তবে রোববারের অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ভারতের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন পর কমে আসবে।” 

তুরস্ক, মিশর ও চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

নতুন দুটি তুলার জাত অবমুক্ত
অনুষ্ঠােন দেশে প্রথমবারের মতো দুটি বিটি তুলার জাতের অবমুক্ত করেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

অন্যান্য জাতের চেয়ে অবমুক্ত হওয়া ভারতের জে কে এগ্রি-জেনেটিক্স লিমিটেডের উদ্ভাবিত জে কে সি এইচ ১৯৪৭ বিটি এবং জে কে সি এইচ ১৯৫০ বিটির ফলনও দ্বিগুণ হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে ৮৫ লাখ বেল তুলার চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় মাত্র ২ লাখ বেল। ১৫ লাখ বেল তুলা দেশে উৎপাদন করার সুযোগ আছে। হাইব্রিড ও বিটি তুলার চাষের মাধ্যমে চাহিদা মেটানো যাবে।

সিডিবির নির্বাহী পরিচালক ফখরে আলম ইবনে তাবিব বলেন, তুলা আমদানিতে বছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। চলতি বছরের ৭ মে ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটি দুটি জাত অবমুক্তির অনুমোদন দেয়।

তিনি বলেন, বিটি তুলার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪৫০০ কেজি। বিটি তুলা চাষে উৎপাদন ব্যয় ১২-১৫ শতাংশ কমবে এবং উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বাড়বে। বিটি তুলা চাষে প্রাকৃতিক দূষণ কম ও কৃষকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

“তুলা বীজ বপনের আগে-পরে স্বল্পকালীন সবজি, মসলা, ধান ও ডাল আবাদ করা যাবে। তুলা থেকে আঁশ ছাড়াও ভোজ্য তেল, খৈল ও জ্বালানি উপজাত পাওয়া যায়।”

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসাল ভারত পরবর্তী

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক বসাল ভারত

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর