পেঁয়াজের পর চড়ছে রসুন, সবজির দরও চড়া
গত দু-তিন দিনেই মসলাজাতীয় এই পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মাছ-মাংস ও সবজির দামও রয়েছে বাড়তির তালিকায়।
পেঁয়াজ ও ডিম নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই নতুন করে দাম বাড়তে শুরু করেছে রসুনের। গত দু-তিন দিনেই মসলাজাতীয় এই পণ্যটির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। মাছ-মাংস ও সবজির দামও রয়েছে বাড়তির তালিকায়।
দেশে প্রতিদিনই আসছে আমদানি করা পেঁয়াজ। ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরও দেশটি থেকে পেঁয়াজ আসছে; এরই মধ্যে ভারত ছাড়াও চীন, মিশর,পাকিস্তানসহ নয় দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এই নয়টি দেশ থেকে জরুরিভিত্তিতে ২১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।
বাজারে তদারকিও চলছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দেশে পেঁয়াজের দাম এমনিতেই বাড়ছিল; অস্থিরতা শুরু গত শনিবার ভারত পণ্যটি রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর।
ওই সময় দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫৫ টাকা কেজি। পাঁচ দিন পর শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপড়া বাজারে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। যদিও মহল্লার দোকানে কেউ কেউ ১০০ টাকাও রাখছেন।
আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এক লাফে উঠেছে ৮০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে কৃষি মন্ত্রণালয় ভারত ছাড়া ৯টি দেশ থেকে ২১ হাজার ৫৮০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বিপরীতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসেছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন।
ডিমের দাম অবশ্য খানিকটা কমেছে। বাড়তে বাড়তে ১৭০ টাকা ডজনে ওঠে যাওয়া ফার্মের ডিম শুক্রবার ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাজারে।
এখন নতুন করে বাড়ছে রসুনের দাম। মাস দেড়েক আগেও রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। ধীরে ধীরে বেড়ে সেটি এখন আড়াইশ টাকায় উঠেছে। গত দু-তিন দিনের ব্যবধানেই আমদানি করা রসুনের দর কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়।
আর দেশি রসুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। একইভাবে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৫০ থেকে ২৬০ এবং মিয়ানমারের আদা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাংস আগের মতোই উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি মুরগি ৩০০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ করতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
মাছের বাজারেও ক্রেতার জন্য নেই কোনো সুখবর। মাঝারি আকারের রুই-কাতলার কেজি ৪০০-৪৫০ টাকা; আর বড় সাইজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০০ টাকা দরে।
নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদার তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ থেকে ২৭০, পাঙ্গাস ২২০ থেকে ২৪০, হাইব্রিড কই মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য মাছের দামও বেশ চড়া। ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দাম আগের মতোই সাধারণের নাগালের বাইরে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি এক হাজার টাকার বেশি এবং এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা রাখছেন বিক্রেতারা।
গত সপ্তাহে দুই-তিনটি ছাড়া সবজির বাজার মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। তবে এখন কয়েকটির দাম বাড়তির দিকে। করলা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, গাজর ১১০ থেকে ১২০, কচুরমুখি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে কেনা গেছে এসব সবজি।
এ ছাড়া অন্যান্য সবজি কিনতে গেলেও কেজিতে ৬০ টাকার বেশি গুনতে হবে ক্রেতাকে। কাঁচামরিচ বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারে সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি এক ব্যাংকের কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বাজার করতে আসলেই মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সব জিনিসের দামই বেশি। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে লাগে ৮০০ টাকা। ৫০০ টাকার সবজি কিনলেও চার জনের সংসারে সপ্তাহ যায় না। কী কিনব বলেন?”
এই বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ বললেন, “বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি কম আসছে। সে কারণে দাম একটু বেড়েছে।”
আটার দাম অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। ২ কেজি প্যাকেট আটার দাম এখন ১১০ টাকা, সপ্তাহ দুয়েক আগেও তা ছিল ১৩০। ময়দার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা।
কিছুদিন আগে মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়লেও গত সপ্তাহে কমেছে।মানভেদে নাজিরশাইল পাওয়া যাচ্ছে ৬০ এবং ৮৫ টাকায়। মিনিকেটের দাম ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বেশ কিছু দিন ধরে দেশে চালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে।
কমেন্ট