সরকারি চাকরির আবেদনেও ভ্যাট

সরকারি চাকরির আবেদনেও ভ্যাট

এই প্রথম সরকারি চাকরির আবেদনের ফি বা মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটও কেটে রাখা হবে; যা যোগ হবে সরকারের কোষাগারে।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করলে সরকার এত দিন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) নিত না। কিন্তু এখন থেকে চাকরির আবেদন মাশুলের (ফি) সঙ্গে ভ্যাটও নেওয়া শুরু করল সরকার। 

এই প্রথম সরকারি চাকরির আবেদনের ফি বা মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটও কেটে রাখা হবে; যা যোগ হবে সরকারের কোষাগারে। 

রাজস্ব আদায় বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৭ আগস্ট চাকরির আবেদন মাশুলের সঙ্গে ভ্যাটের হার বসিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ফলে একই বিষয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনটি বাতিল হয়ে গেছে। 

ভ্যাট আরোপিত হওয়ায় এখন সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির আবেদনকারীদের ব্যয় কিছুটা বাড়বে। 

তবে বৃদ্ধির পরিমাণ খুব বেশি নয়। ভ্যাট আরোপিত হবে মূলত পরীক্ষার মাশুলের সার্ভিস চার্জের (টেলিটক বাংলাদেশের কমিশন) ওপর ১৫ শতাংশ। 

দুই প্রজ্ঞাপন মিলিয়ে দেখা যায়, মাশুল বৃদ্ধি করা হয়নি, শুধু ভ্যাট আরোপিত হয়েছে; যার কারণে আবেদনকারীদের ব্যয় কিছুটা বাড়বে। 

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন ও পরীক্ষার ফি নেওয়া হবে। পরীক্ষার ফি বাবদ সংগ্রহ করা অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিকম বাংলাদেশকে দিতে হবে। ভ্যাট হিসাবে আদায় করা হবে কমিশনের ১৫ শতাংশ। 

নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি হবে ৬০০ টাকা। এর সঙ্গে টেলিকম বাংলাদেশের সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ বা ৬০ টাকা; এই ৬০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ বা ৯ টাকা ভ্যাট। 

অর্থাৎ নবম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে ৬৬৯ টাকা লাগবে। 

দশম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন ফি ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ এবং ৭ টাকা ৫০ পয়সা ভ্যাট যোগ হবে। এই গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন করতে লাগবে ৫৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। 

এভাবে ১১ ও ১২তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের ৩৩৪ টাকা ৫০ পয়সা, ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে চাকরিপ্রত্যাশীদের ২২৩ টাকা ও ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিপ্রত্যাশীদের ১১১ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সরকার বিভিন্নভাবে করজাল বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। সে কারণেই এই ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।” 

“কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টি এড়ানো গেলে ভালো হতো। বেকার বা চাকরি প্রত্যাশী মানুষদের কর থেকে রেহাই দেওয়া যেত; তারা তো মাশুল দিচ্ছেন-ই, মূসক না নিলেও চলত।”   

কয়েকটি শর্ত 

টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন ও পরীক্ষা ফি দেওয়া যাবে এবং পরীক্ষার মাশুল বাবদ সংগৃহীত অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডকে দেওয়া হবে এবং কমিশন হিসেবে পাওয়া অর্থের ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাবে আদায় করা যাবে। 

টেলিটক বাংলাদেশ পরীক্ষার মাশুল বাবদ অর্থ নেওয়ার পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে জমা দেওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করবে, তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ওই অর্থ নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা করতে পারবে। 

অনলাইন আবেদন না নিলে পরীক্ষার মাশুল বাবদ অর্থ চালানের মাধ্যমে দিতে হবে। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যাংক ড্রাফট/ পে অর্ডারের মাধ্যমে এই অর্থ নিতে পারবে। 

পরীক্ষার মাশুল বাবদ আদায় করা অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১৩ ডিজিট প্রাতিষ্ঠানিক কোড এবং ৭ ডিজিট নতুন অর্থনৈতিক কোড ১৪২২৩২৬-এ অটোমেটেড চালানে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে। 

কোনো প্রতিষ্ঠান ম্যানুয়াল চালানে (টিআর ফরম) পরীক্ষা ফি জমা করতে চাইলে ‘১-প্রাতিষ্ঠানিক কোড (চার অঙ্কবিশিষ্ট) পরিচালনা কোড (চার অঙ্কবিশিষ্ট)-অর্থনৈতিক কোড (২০৩১)’-এ জমা করতে হবে।

রাজস্ব আদায়: ১৫% প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু পরবর্তী

রাজস্ব আদায়: ১৫% প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু

কমেন্ট