বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ৬১ ডলারে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য সাত শতাংশ; প্রতি ব্যারেলে এই তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৬০ ডলার।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবার চড়ছে। প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯০ ডলার ছুঁইছুঁই করছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ৬১ ডলারে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য সাত শতাংশ; প্রতি ব্যারেলে এই তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৬০ ডলার।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ইতিবাচক অর্থনীতির খবর এবং তেলের বড় বড় উৎপাদকেরা সরবরাহ কমাবে- এমন আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
টানা দুই সপ্তাহ দাম কমার পর গত সপ্তাহে এই দুই ধরনের তেলের দাম ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১ সেপ্টেম্বর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৮ দশমিক ৯৯ ডলারে ওঠে। পরে তা কিছুটা কমার পর সোমবার আবার বাড়ল।
আগস্ট মাসে চীনের শিল্পোৎপাদন অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। দেশটির উৎপাদনসূচক চাঙা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়ায় তেলের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ, চীনের তেলের চাহিদা বাড়বে, এই ধারণা থেকে দাম বাড়ছে।
চীন এক মাস ধরে অর্থনীতি চাঙা করতে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেমন গত সপ্তাহেই দেশটির বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে গৃহঋণের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সে কারণেও তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে।
এ ছাড়া চীনের দুর্দশাগ্রস্ত আবাসন খাত নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশা তৈরি হয়েছে যে চীন সরকার এই খাত চাঙা করতে আরও কিছু ব্যবস্থা নেবে। আবাসন খাত চীনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশই আসে এই খাত থেকে।
এদিকে গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে সে দেশে অকৃষি খাতের কর্মসংস্থান আগের মাসের চেয়ে ১ লাখ ৮৭ হাজার বেড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় অর্থাৎ কর্মসংস্থানের গতি কমে যাওয়ার কারণে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে তেলের সরবরাহ আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ওপেকের সদস্যদের সঙ্গে চলমান তেল সরবরাহ হ্রাসের মানদণ্ডের বিষয়ে তার দেশের ঐকমত্য হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই পরিকল্পিত এই হ্রাসের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
রাশিয়া বলেছে, সেপ্টেম্বর মাসে তারা তেলের উৎপাদন দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল হ্রাস করবে। গত আগস্ট মাসে তারা যে পাঁচ লাখ ব্যারেল হ্রাস করেছিল, তার অতিরিক্ত আরও তিন লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাবে রাশিয়া।
এ ছাড়া সৌদি আরব যে নিজে থেকে ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের কথা বলেছিল, তারা তা অক্টোবর মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখবে।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, ২০২২ সালে তা ১৩৩ ডলারে ওঠে।
কিন্তু এরপর যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ায় তেলের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। একসময় তা যুদ্ধের আগের পর্যায়ে নেমে আসে।
তবে সৌদি আরব তেলের দাম আবারও বাড়াতে উৎপাদন কমাতে শুরু করে। তারা চায়, তেলের দাম প্রতি ব্যারেল অন্তত ৮০ ডলার হোক। তাদের উৎপাদন হ্রাসের কারণে তেলের দাম অবশ্য এখন ৯০ ডলারের কাছাকাছি উঠে গেছে।
বাংলাদেশর বাজার
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।
অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।
এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কমেন্ট