বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম আলু পেঁয়াজ
দাম বেঁধে দেওয়ার একদিন পর ছুটির দিন শুক্রবার পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। ফলে তাদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম, পেঁয়াজ ও আলু।
বাজার লাগাম টানতে ভোজ্যতেল ও চিনির পাশাপাশি প্রথমবারের মত আরও তিনটি পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ, ডিম ও আলু—এই তিন পণ্যের দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তিন পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা।
কিন্তু শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া—এই তিন কাঁচাবাজারের কোনোটিতেই সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য তিনটি বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
এই তিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দাম বেঁধে দেওয়ার একদিন পর ছুটির দিন শুক্রবার পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। ফলে তাদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ন্যায্য দাম কার্যকর করব।”
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিচেন মার্কেটের সামনের সড়কে কয়েকজন ডিম বিক্রেতা ৫০ টাকা হালি দরে ফার্মের ডিম বিক্রি করছেন। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে ৪৮ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল নামের একজন বিক্রেতা বললেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) আড়ত থেকে ১০০ পিছ ডিম কিনেছি ১ হাজার ১৬০ টাকা দরে। তার সঙ্গে ২০ টাকা যোগ করেন ভ্যানভাড়া। আবার ১০০ ডিমে গড়ে ৩টি ভাঙা থাকে। এখানে লোকসান হয় ৩০ টাকা। তাতে ১০০ ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ টাকায়। তার মানে একেকটা ডিমের দাম ১২ টাকা ১০ পয়সা।”
“তাহলে কীভাবে ১২ টাকায় প্রতি পিচ ডিম বিক্রি করব,” প্রশ্ন করেন রবিউল।
এই ডিম বিক্রেতা বলেন, “আজ (শুক্রবার) আড়তে খোঁজ নিয়েছিলাম। ডিমের দাম কমেনি। আড়তে দাম বেশি থাকার পরও যদি আমাদের ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করতে বাধ্য করে তাহলে কাল থেকে দোকান বন্ধ করে দেব।”
ডিমের পর আলু ও দেশীয় পেঁয়াজ খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আলুর কেজি ৫০ টাকা। বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
তার মানে কারওয়ান বাজারেই সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ ১০-১৫ টাকা এবং আলু ১৪-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘদিন ধরে শেওড়াপাড়া বাজারে বাজারে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি করেন রিপন রায়। তিনি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আজ সকালে পাইকারি বাজার থেকে আলু ৪৪/৪৫ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে কিনেছি।”
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কিনতে না পালে সরকারের দামে বেচব কেমনে?”
এদিকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মের ডিমের হালি ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা, সাদা আলু আলু ৪৮-৫০ এবং দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে বিক্রেতা শাহাদৎ একটি রসিদ দেখিয়ে বললেন, “কারওয়ান বাজার পাইকারি বাজার থেকে আজ সকালে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৬ টাকা দরে কিনেছি। বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। কম দামে কিনতে পারলে তো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে পারর।”
তার মানে প্রথমবারের মত বেঁধে তিনটি পণ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি কেন করছেন না এমন প্রশ্ন করলে শেওড়াপাড়া বাজারের মুনা মুদি দোকানদার জসিম উদ্দিন এআরএইচ ডটকমকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার যদি কিনে দেয় তাইলে আমাগো বেঁচতে সমস্যা কোনো সমস্যা নেই। আমরা খুব কম লাভে পণ্য বিক্রি করি। কম দামে পণ্য কিনতে পারলে অবশ্যই কম দামে বিক্রি করব। বেশি দামে কিনলে কিভাবে কম দামে বিক্রি করব।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু মানভেদে ৪৩ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রঅ টিপু মুনশি বলেছিলেন, দাম বেঁধে দেওয়া তিন কৃষিপণ্য কী দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি শুক্রবার থেকে তদারকিতে নামবে জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
কিন্তু কোনো বাজারেই শুক্রবার অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
ভোজ্যতেলের দাম কমেনি
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরও ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ ছাড়া পাম তেলের দাম ৪ টাকা কমছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা এবং পাম তেলের দাম ৪ টাকা কমে যাবে। শুক্রবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”
নতুন দর নির্ধারণের ফলে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল কিনতে খরচ হবে ১৬৯ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৭৪ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১৪৯ টাকায়, যা এতদিন ছিল ১৫৪ টাকা।
এ ছাড়া পাম তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা কমে ১২৪ টাকায় বিক্রি হবে। এতদিন পাম তেলের দাম ছিল লিটারে ১২৮ টাকা।
কিন্তু রাজধানীর কোনো বাজারেই কম দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। আগের বেঁধে দামেই বিক্রি হচ্ছে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যটি।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়েছিল। তার আগে ১১ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরও জানান, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে।
কিন্তু কোনো বাজারইে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে।
কমেন্ট