বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৯৫ ডলার ছাড়াল

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৯৫ ডলার ছাড়াল

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ইতিবাচক খবর এবং বড় বাজারের দেশগুলো শীতের দিকে অগ্রসর হওয়ায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে-এমন আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছন জ্বালানি তেল বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম চড়ছেই; ছুঁটছে ১০০ ডলারের দিকে।

জ্বালানি তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯৫ ডলার ছাড়িয়েছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ছাড়িয়েছে ৯২ ডলার।

এই দর ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গত বছরের ১৬ নভেম্বরের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলে দর এত উচ্চতায় উঠেনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলেছে, বুধবার বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জ্বালানি তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ ডলার ৪৭ সেন্ট বা প্রায় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৯৫ ডলার ৪৩ সেন্ট।

আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ১ ডলার ৭৬ সেন্ট বেড়ে উঠেছে ৯২ ডলার ১৫ সেন্টে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ইতিবাচক খবর এবং বড় বাজারের দেশগুলো শীতের দিকে অগ্রসর হওয়ায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে-এমন আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছন জ্বালানি তেল বিশেষজ্ঞরা।

এছাড়া তেলের বড় বড় উৎপাদকেরা সরবরাহ কমাবে- এমন আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন তারা।

রয়টার্স জানিয়েছে, বাজারে সরবরাহ এমনিতেই টান টান। রাশিয়া সাময়িকভাবে ডিজেল ও গ্যাসোলিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ বলেছে, সুদহার আরও বেশ কিছুদিন বাড়তি থাকবে।

এই বাস্তবতায় অনলাইনে ব্যবসা করা আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সিকামোর রয়টার্সকে বলেন, রাশিয়ার সাময়িকভাবে তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার খবর বাজার ঠিকঠাক হজম করতে পারেনি।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম মাসাধিককাল ধরে বাড়ছে। এর মধ্যে টানা তিন সপ্তাহ বৃদ্ধির পর ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার তেলের দাম কিছুটা কমেছিল। এরপর থেকে আবার বাড়ছে।

মূলত সৌদি আরব ও রাশিয়ার সরবরাহ হ্রাসের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ওপেক যে তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ওপর আবার রাশিয়া ও সৌদি আরব নিজে থেকে আরও উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলবে। এই বাস্তবতায় তেলের দাম বাড়ছে।

এর মধ্যে গত সপ্তাহে মস্কো নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার কথা বলে সাময়িকভাবে গ্যাসোলিন ও ডিজেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ইউরোপের শীতকাল শুরুর ঠিক আগে আগে এই ঘোষণা বাজারে একধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, শীতের সময় ঘর গরম করার জন্য ইউরোপীয়দের বিপুল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এই জ্বালানির সংকট ইউরোপের জন্য রীতিমতো অশনিসংকেত।

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেলের খনির সংখ্যা আবার কমে ৫০৭-এ নেমেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর যা সর্বনিম্ন। জ্বালানিপ্রযুক্তি কোম্পানি বেকার হিউজের সাপ্তাহিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি সপ্তাহে চীনের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার কথা। আশা করা হচ্ছে, এই প্রতিবেদন থেকে ইতিবাচক খবর পাওয়া যাবে। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজারের যা পরিস্থিতি, তাতে তেলের দাম ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে যে পর্যায়ে ছিল, তার ওপরে যেতে দেওয়া হবে না। তেলের দাম এর ওপরে উঠে গেলে বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য বিনিয়োগকারীরাই দাম এর ওপরে যেতে দেবেন না।

সিএমসি মার্কেটস বিশ্লেষক লিওন লি বলেন, "অক্টোবরে তেলের দাম সামগ্রিকভাবে একটি অস্থির প্রবণতার দিকে যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদে এটি হয়তো ১০০ ডলার ছাড়ানোর আশঙ্কা নেই। তবে আরও বাড়তে পারে।”

বাংলাদেশর বাজার

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।    

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।   

মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।    

এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে। 

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।   

অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।    

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম আলু পেঁয়াজ পরবর্তী

বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম আলু পেঁয়াজ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর