বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৬ সেন্ট বা দশমিক ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার ৯৬ সেন্টে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম প্রায় একই পরিমাণ কমে ৮২ ডলার ২৬ সেন্টে নেমেছে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন চলছে। টানা কয়েক দিন কমতে কমতে তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৪ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নেমেছে ৮২ ডলারে।
এই দর ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। মার্চ মাসে তেলের দাম এই পর্যায়ে ছিল।
মাঝে কয়েক দিন বাড়তে বাড়তে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলারের দিকে ছুঁটছিল; ২৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উঠেছিল ৯৩ ডলারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৬ সেন্ট বা দশমিক ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার ৯৬ সেন্টে নেমে এসেছে।
আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম প্রায় একই পরিমাণ কমে ৮২ ডলার ২৬ সেন্টে নেমেছে।
সব মিলিয়ে ১ অক্টোবর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই ধরনের তেলের দাম ১২ শতাংশের বেশি কমেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিশ্ব অর্থনীতির নানা উদ্বেগের কারণে চাহিদা কমায় জ্বালানি তেলের দামে ধস নেমেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রলের চাহিদা কমে যাওয়ায় তেলের বাজারে এই দরপতন বলে মনে করছেন জ্বালানি তেল বিশেষজ্ঞরা।
রয়টার্স ও এএনডিএ সিনিয়র বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেছেন, "একটি উর্ধ্বমূখী সপ্তাহের পরে তেলের দাম নিম্মমূখী হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণেই এই পতন।”
“ওপেকের উৎপাদন কমানোর নীতি বজায় রাখার সিদ্ধান্ত তেলের বাজারে খুব কম প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা এখন অর্থনৈতিক উদ্বেগের দিকে অনেক বেশি মনোযোগী।”
মূলত সৌদি আরব ও রাশিয়ার সরবরাহ হ্রাসের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। ওপেক যে তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ওপর আবার রাশিয়া ও সৌদি আরব নিজে থেকে আরও উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দেয়, যা চলতি বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলবে। এই বাস্তবতায় তেলের দাম চড়ছিল’ ছুঁটছিল ১০০ ডলারের দিকে।
বাংলাদেশর বাজার
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
মে মাসের শেষের দিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।
অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।
এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কমেন্ট