বেঁধে দেওয়া তিন পণ্যের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে
দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় উঠেছে। আলুর কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু এক মাস হতে চললেও এই তিন পণ্যের একটির দামও কমেনি; উল্টো আগের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় উঠেছে। আলুর কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে।
যখন এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়, তখন দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ডিমের ডজন ছিল ১৫০ টাকা। আর আলুর কেজি ছিল ৪২ খেবে ৪৫ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শনিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া—এই তিন কাঁচাবাজারে এর চেয়েও বেশি দামে পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা অবশ্য এই দাম বৃদ্ধির জন্য গত কয়েক দিনের বৃষ্টিকে দায়ি করছেন। তারা বলেছেন, বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে এই তিন পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে, যার প্রভাব পড়েছে দামে।
পেঁয়াজ
আবার অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। চার থেকে পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিনই একটু একটু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দামই বাজারে গত কয়েক দিনে বেড়েছে।
নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। তবে এখনো যেসব বিক্রেতার কাছে পুরোনো দামে কেনা পেঁয়াজ আছে, তাঁরা দাম কিছুটা কম রাখছেন।
গত কয়েক দিনে নতুন করে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহঘাটতিকে দায়ী করছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে পেঁয়াজের সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে, যার প্রভাব পড়েছে দামে।
শনিবার রাজধানীর মগবাজার ও মালিবাগ বাজার এবং আশপাশের দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।
গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। ওই সময় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছেন মানভেদে ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকায়। তাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৮৮ থেকে ৯২ টাকা। কারওয়ান বাজারের চেয়ে ঢাকার অন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি থাকে।
তবে শেওড়াপাড়া বাজারের যেসব বিক্রেতার কাছে পুরোনো দামে কেনা দেশি পেঁয়াজ আছে, তারা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে তা বিক্রি করছেন।
এদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের অনেকেই দেশি পেঁয়াজ না কিনে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও গত চার থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শেওড়াপাড়া বাজারের মেসাস মুন টেডার্সের বিক্রেতা রুহুল আমিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, সরবরাহসংকটে দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে। বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে বলে জানান তিনি।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তার একটি দেশি পেঁয়াজ। তবে দাম বেঁধে দেওয়ার পরও সরকার–নির্ধারিত ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় কোথাও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। উল্টো দাম বেঁধে দেওয়ার পর নতুন করে এখন আরেক দফা দাম বাড়ল।
দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকার চলতি বছরের ৫ জুন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আগস্টের শেষে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় সরকার তখন ভারতের বাইরে আরও ৯টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।
ওই ৯ দেশ ছিল চীন, মিসর, পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর চলতি অর্থবছরে যত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, তার অধিকাংশই ভারত থেকে এসেছে। তবে ২০ আগস্ট পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রতিবেশী দেশটি ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাতে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে যায়।
তখন আমদানিকারকেরা বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির আগ্রহ দেখায়। সরকারও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত ছাড়া আরও ৯ দেশ থেকে আমদানির অনুমতি দেয়। এরপরও বাজারে নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
ডিম
দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকে বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। প্রতিটির দাম ছিল সাড়ে ১২ টাকা।
শনিবার হঠাৎ করেই প্রতি ডজন ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে করে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা (ডজন ১৪৪ টাকা) বিক্রি করতে দাম বেঁধে দিয়েছিলেন।
কিন্তু গত এক মাসে একদিনও এই বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি হয়নি।
শেওড়াপাড়া বাজারের ডিম বিক্রেতা আকমল বলেন, “বৃষ্টির কারণে সারা দেশ থেকে ঢাকায় ডিম কম আসছে। সে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।”
আলু
শেওড়াপাড়া বাজারে প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখনই খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
গত কয়েক দিনে তা আরও বেড়েছে।
এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জাতীয়-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেছেন; জরিমানা করেছেন।
কিন্তু কোনো পণ্যের দামই কমেনি; উল্টো বেড়েছে।
কমেন্ট