ইসরায়েলে হামাসের হামলা, বাড়ছে তেলের দাম
ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর সোমবার সকাল থেকেই বিশ্ব বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম বাড়ে।
বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ফের চড়ছে। এক দিনের ব্যবধানেই বেশ খানিকটা বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম।
তবে এবার তেলের চাহিদা বৃদ্ধি বা উৎপাদন হ্রাসের কারণে নয়, বেড়েছে রাজনৈতিক কারণে। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর সোমবার সকাল থেকেই বিশ্ব বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম বাড়ে।
সকালে অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলার ১৮ সেন্ট বা ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলার ২৩ সেন্ট বা ৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে হয় ব্যারেলপ্রতি ৮৮ ডলার ৭৬ সেন্ট। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৮৭ দশমিক ০২ ডলারে।
মাঝে অবশ্য কিছুটা নিম্মমূখী হয়। পরে আবার বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা রাত ৮টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৯ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ৮৫ ডলার ৮৮ সেন্টে বিক্রি হয়। ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ১ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়ে ৮৭ ডলার ৫৯ সেন্টে উঠে।
কয়েকদিন আগে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়। টানা কয়েক দিন কমতে কমতে তেলের গত ৬ অক্টোবর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৪ ডলারের নিচে নেমে আসে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।
ওই দর ছিল ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। মার্চ মাসে তেলের দাম এই পর্যায়ে ছিল।
তার আগে কয়েক দিন টানা বাড়তে বাড়তে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলারের দিকে ছুঁটছিল; ২৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উঠেছিল ৯৩ ডলারে।
এর পর অবশ্য তেলের দামে ধস নামে। বিশ্ব অর্থনীতির নানা উদ্বেগের কারণে চাহিদা কমায় জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সব মিলিয়ে ১ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত দুই ধরনের তেলের দাম ১২ শতাংশের বেশি কমে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম নেমে আসে ৮৪ ডলারের নিচে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর সোমবার বিশ্ব বাজারে তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনের হামাস বাহিনী শনিবার ইসরায়েলে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক হামলার চালিয়েছে। এই হামলার কয়েক শ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং পরিণামে ইসরায়েলির সামরিক বাহিনী গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে। রোববার দিনভর এই হামলা চলেছে।
এএনজেড ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা এক নোটে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়লে তেলের দামও বাড়বে। তেলের দামে আরো উত্থান–পতন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে দূতিয়ালির করছে, এই সহিংসতার জেরে সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। কথা ছিল, ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে।
জানা গেছে, সৌদি আরবের কর্মকর্তারা গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তির বিনিময়ে তারা আগামী বছরের শুরুতে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। সেটা হলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে, দামও কমে আসবে।
তবে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে সম্প্রতি যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা কিছুটা থিতিয়ে পড়বে।
পশ্চিমা নেতারা হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন, যদিও ইরান ও তাদের মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ এই হামলার প্রশংসা করেছে।
ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ এই হামলার পেছনে ইতোমধ্যে ইরানের সম্পৃক্ততার দিকে আঙুল তুলেছে; বাজারও সেই সম্ভাবনার আশঙ্কা করছে।
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ব্যাংকের বিশ্লেষক বিবেক ধর এক নোটে বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে তেল সরবরাহ ও পরিবহন কমলে তেলের বাজারে লম্বা সময়ের জন্য এই সংঘাত প্রভাব ফেলবে।
বিবেক ধর আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের হামলার সঙ্গে ইরানি গোয়েন্দা বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা বললে দেশটির তেল সরবরাহ ও রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে।
কমেন্ট