ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের দাম

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তেলের দাম

ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক দিনের ব্যবধানেই প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম।

তবে এবার চাহিদা বৃদ্ধি বা উৎপাদন হ্রাসের কারণে নয়, তেলের দামের এই উল্লম্ফন রাজনৈতিক কারণে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব বাজারে চড়ছে তেলের দাম।

ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করার পর তেলের দাম পাগলা ঘোড়ার মত ছুঁটছে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১২টায় অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলার ৮৯ সেন্ট বা ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ৯০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়ে প্রায় ৯০ ডলারে উঠেছে।

সেই সঙ্গে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ৪ ডলার ৭৫ সেন্ট বেড়ে ৮৭ ডলার ৬৬ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

মাঝে অবশ্য কিছুটা নিম্মমূখী হয়। পরে আবার বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা রাত ৮টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৯ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ৮৫ ডলার ৮৮ সেন্টে বিক্রি হয়। ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ১ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়ে ৮৭ ডলার ৫৯ সেন্টে উঠে।

কয়েকদিন আগে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়। টানা কয়েক দিন কমতে কমতে গত ৬ অক্টোবর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৪ ডলারের নিচে নেমে আসে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।

ওই দর ছিল ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। মার্চ মাসে তেলের দাম এই পর্যায়ে ছিল।

তার আগে কয়েক দিন টানা বাড়তে বাড়তে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতি ব্যারেল ৯৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উঠেছিল ৯৩ ডলারে।

এর পর অবশ্য তেলের দামে ধস নামে। বিশ্ব অর্থনীতির নানা উদ্বেগের কারণে চাহিদা কমায় জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সব মিলিয়ে ১ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত দুই ধরনের তেলের দাম ১২ শতাংশের বেশি কমে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম নেমে আসে ৮৪ ডলারের নিচে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত সোমবার থেকে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের মত।

ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি শুক্রবার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজার

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।   

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।  

মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।   

এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।   

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।  

অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।   

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

বেঁধে দেওয়া দরের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, ডিমের ডজন ১৭০ টাকা পরবর্তী

বেঁধে দেওয়া দরের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, ডিমের ডজন ১৭০ টাকা

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর