ঢাকায় ট্রাকে করে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি শুরু
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি চত্ত্বরে এই ডিম বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেবন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
সরকারের বেঁধে দেওয়া ১২ টাকা দামে ডিম বিক্রি শুরু করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধেগতির মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ডিমেরস উচ্চমূল্য মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মত আলু ও পেঁয়াজের সঙ্গে প্রতিটি ফার্মের ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকা বেঁধে দেয়। সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশে এই দরে ডিম বিক্রি করতে নির্দেশ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনিশি।
কিন্তু গত এক মাসের বেশি সময়ে দেশের কোথাও এই দরে ডিম বিক্রি হয়নি। উল্টো গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি ডিমের দাম নতুন করে ১ টাকা করে বেড়েছে। খুচরায় এক হালি ডিম ৪৮ টাকা করে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।
এই পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকায় ট্রাকসেলের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে ডিম বিক্রি শুরু করেছে বিপিএ। সোমবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে টিসিবি চত্ত্বরে এই ডিম বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেবন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিপিএ। ধীরে ধীরে ঢাকা শহরের ১৬টি স্থানে এ ধরনের বিপণন কাজ বিস্তৃত করা হবে বলে জানান বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার। দাম আরও কমলে সেই দামে ভোক্তারা ডিম পাবেন বলে জানান তিনি।
সরকার খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এক মাস পার হয়ে গেলেও তা কার্যকর করা যায়নি।
উল্টো গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি ডিমের দাম নতুন করে ১ টাকা করে বেড়েছে। খুচরায় এক হালি ডিম ৪৮ টাকা করে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা; ডজন ১৬৫ টাকা।
রাজধানীর বাজারগুলোতে অবশ্য প্রতি ডজন ডিম ১৭০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে।
ডিম বিপণন উদ্বোধন করতে এসে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক খামারির ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করলেও এ খাত নিয়ন্ত্রণ করে ৫/৬টি করপোরেট কোম্পানি।
“তারা চুক্তিভিত্তিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশের দাম নিয়ন্ত্রণ করে।”
গত বছরও এ সময়ে ডিমের বাজার অস্থির হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নেওয়ার পর আমাদের ধারণা হয়েছিল এই বছর হয়ত সবকিছু সিস্টেমে চলে আসবে। কিন্তু এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি হচ্ছে।
“কারসাজির একটি নীল নকশা করা হয়েছে। প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় খোলা বাজারে প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ১২ টাকা এবং খামারে ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছিল। আমারা অভিযান চালিয়ে সেটা সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ টাকায় নামাতে পেরেছিলাম।”
ডিমের দাম কমাতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে মহাপরিচালক বলেন, খামার পর্যায়ে যেখানে ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে ডিম বিক্রি করার কথা, সেখানে ১১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে শুরু করে ১১ টাকা ৫০ পয়সায় খামার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
“তারা বেশি উৎপাদন মূল্য দেখিয়ে এমনটি করেছে। অনেক সময় তারা পশুখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে থাকে। এখন খুচরা পর্যায়ে ১৩ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। গত ৭ দিন ধরে এই পরিস্থিতি। এর কারণ হচ্ছে খামার পর্যায়ে ১১ টাকা ৯০ পয়সা করে বিক্রি হচ্ছে।
“সে কারণে আজকে খামারিরা ১২ টাকা করে ডিম বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আমি তাদের প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে গ্রহণ করেছি। তারা খুদ্র খামারিদের কাছ থেকে ডিম এনে ঢাকার ১৬টি স্থানে বিক্রি করবে।”
বিশেষ পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিংয়ে ‘ভালো ফল দিচ্ছে না’ মন্তব্য করে মহাপরিচালক বলেন, “এ ধরনের ট্রাক সেলের ভালো প্রভাব রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা ডিমও বিক্রি শুরু হবে ন্যায্যমূল্যে।”
অন্যদের মধ্যে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কমেন্ট