ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ধাক্কায় পণ্যমূল্য আবার বাড়বে: বিশ্ব ব্যাংক

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ধাক্কায় পণ্যমূল্য আবার বাড়বে: বিশ্ব ব্যাংক

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুট’ প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। রোববার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

ইসরায়েল–ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রায় এক মাস হতে চললো; থামার কোনো লক্ষণ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত মধ্যপ্রাচ্যের এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বৈশ্বিক পণ্য বাজারকে অজানা গন্তব্যে  ঠেলে দিতে পারে। ফের অস্থির হয়ে উঠতে পারে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য। গোটা বিশ্ব বড় ধরনের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুট’ প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। রোববার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে এই যুদ্ধের তিনটি ঝুঁকি—ছোট, মাঝারি এবং বৃহৎ প্রভাব অনুমান কথা উল্লেখ করে ঐতিহাসিক নজিরগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের প্রভাব এখন পর্যন্ত সীমিত। কিন্তু জ্বালানি তেলের অস্থির বাজার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে তীব্রতর করতে পারে। কেননা, জ্বালানি তেলের দরের উপর সব পণ্যের দাম নির্ভর করে। ইতোমধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৬ শতাংশ বেড়েছে।

“যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি ব্যারেল ১৫৭ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে। যেটা হবে বৃহৎ প্রভাব; আর এই প্রভাবে পণ্যমূল্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা অনুমান করাও কঠিৎ।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক চড়ে গিয়েছিল। ছোট-বড় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি চূড়ায় উঠেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য তা নিম্মমূখী হয়েছে; দেশে দেশে যখন মূল্যস্ফীতির পারদ কমছিল—তখন মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সব ওলোটপালট করে দিয়েছে। এর শেষ কোথায়—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি এখন ৫৩ বছর আগে ১৯৭০ সালের মন্দার তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধও যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বৈশ্বিক পণ্য বাজারকে অজানা গন্তব্যে ঠেলে দিতে পারে। যার মাশুল দিতে হবে গোটা বিশ্বকে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে পণ্য বাজারের জন্য মধ্যপাচ্যের যুদ্ধের সম্ভাব্য নিকট-মেয়াদী প্রভাবের একটি প্রাথমিক ধারনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যুদ্ধ দ্রুত থেমে এর প্রভাব সীমিত আকারে পড়বে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার কারণে তেলের দাম বর্তমান ত্রৈমাসিকে গড়ে প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরের বছর গড়ে প্রতি ব্যারেল ৮১ ডলারে নেমে আসবে।

সামগ্রিকভাবে পণ্যের দাম ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে কৃষিপণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

“বৈশ্বিক পণ্য বাজারে যুদ্ধের প্রভাব এখন পর্যন্ত সীমিত। সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সামগ্রিকভাবে তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। কৃষিপণ্য, অধিকাংশ ধাতু এবং অন্যান্য পণ্যের দাম নিম্মমূখী ধারায় রয়েছে।”

“দ্বন্দ্ব বা সংঘাত বাড়তে থাকলে পণ্যের দামের দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত অন্ধকার হয়ে যাবে “

প্রতিবেদনে ’৭০ এর দশক থেকে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনটি ঝুঁকি পরিস্থিতিতে কী ঘটতে পারে তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। প্রভাবগুলো তেল সরবরাহে ব্যাঘাতের মাত্রার উপর নির্ভর করবে।

যুদ্ধের প্রভাব যদি ‘ছাট’ হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ প্রতিদিন ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ ব্যারেল হ্রাস পাবে; যা ২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় দেখা হ্রাসের প্রায় সমান। এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম প্রতি ব্যালের ৯৩ থেকে ১০২ ডলারে উঠবে।

যুদ্ধের প্রভাব যদি ‘মাঝারি’ হয়, তাহলে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের মত পরিস্থিতির মত হবে। বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ প্রতিদিন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ কমবে। তেলের দাম প্রতি ব্যালের ১০৯ থেকে ১২১ ডলারে ঠেকবে।

আর যুদ্ধের প্রভাব যদি ‘বড় বা ব্যাপক’ হয়, তাহলে ১৯৭৩ সালের আরব তেল নিষেধাজ্ঞার সাথে তুলনীয় হবে। বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ প্রতিদিন ৬০ লাখ থেকে ৮০ লাখ ব্যালের হ্রাস পাবে। সেই পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৫৬ থেকে ৭৫ শতাংশ বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ১৪০ থেকে ১৫৭ ডলারে গিয়ে উঠবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন অর্থনীতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনদারমিট গিল বলেছেন, " মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ সংঘাত ১৯৭০ সালের পর পণ্য বাজারের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা থাকা অবস্থাতেই নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ সব এলোমেলো করে দিয়েছে। নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। যদি সংঘাত বাড়তে থাকে, বিশ্ব অর্থনীতি কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দ্বৈত শক্তির ধাক্কার মুখোমুখি হবে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে নয়, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকেও।"

বিশ্বব্যাংকের ডেপুটি চিফ ইকোনমিস্ট এবং প্রসপেক্টস গ্রুপের ডিরেক্টর আয়হান কোস বলেছেন, "যদি তেলে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে অবশ্যম্ভাবীভাবে খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে। আর তাতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। ২০২২ সাল শেষে বিশ্বের ৭০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছিল। নিশ্চিতভাবে এ ই সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।”

“ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুধুমাত্র এই অঞ্চলের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে তীব্র করবে।”

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, যদি যুদ্ধ বা সংঘাত বৃদ্ধি পায়, তাহলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। বৃহত্তর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচিত খাদ্য ও সারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মত বাণিজ্য বিধিনিষেধ এড়ানো। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো প্রায়শই মূল্যের অস্থিরতাকে তীব্র করে এবং খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ায়। খাদ্য ও তেলের উচ্চ মূল্যের প্রতিক্রিয়ায় মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্য ভর্তুকি প্রবর্তন থেকেও তাদের বিরত থাকতে হবে।

“একটি ভাল বিকল্প হল সামাজিক নিরাপত্তা জাল উন্নত করা, খাদ্যের উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং খাদ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি করা।”

আলুর কেজি কোনোক্রমেই ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না: কৃষিমন্ত্রী পরবর্তী

আলুর কেজি কোনোক্রমেই ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না: কৃষিমন্ত্রী

কমেন্ট