সোনার দাম আরও বাড়ল, ভরি ১০৪৬২৬ টাকা
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা এখন ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকায় বিক্রি হবে।
সোনার দাম আরও বেড়েছে। দশ দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
এর ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা এখন ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকায় বিক্রি হবে।
রোববার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ২ হাজার ৮৭৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যান্য মানের সোনার দরও একই হারে বাড়ছে। সোমবার থেকে নতুন এই দর কার্যকর হয়েছে।
রোববার রাতে বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার থেকে সারা দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনা ৯ হাজার ৯৭০ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম হিসাবে প্রতি ভরির দাম পড়বে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা।
এর আগে টানা তিন দফা মূল্যবান এই ধাতুর দাম কমানোর পর গত ১১ অক্টোবর ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরের দিন ১২ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।
এর পর ১৫ অক্টোবর ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।
২৬ অক্টোবর ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৪৪ টাকা করা হয়। ২৭ অক্টোবর থেকে যা কার্যকর হয়।
সবশেষ রোববার বাড়নো হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। সোমবার থেকে এক ভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূইয়া লিটনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের দাম হ্রাস পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।
চলতি বছরের ২০ জুলাই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২২ ক্যারেট সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। তখন ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭৭ টাকা। মাঝে কিছুটা কমলেও ১৬ অক্টোবর আবার লাখ টাকা ছাড়ায়।
জুয়েলার্স সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের পাশাপাশি অন্যান্য মানের সোনার দামও বেড়েছে। ২১ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ভরিতে ১ হাজার ৬৯১ টাকা
হলমার্ক করা ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা সোমবার থেকে ৯৯ হাজার ৯০২ টাকায় বিক্রি হবে। ১৮ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা ভরিতে।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম পড়বে ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা।
তবে রুপার দাম বাড়েনি। হলমার্ক করা প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট রুপার আগের ১ হাজার ৭১৫ টাকা দরেই বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেট রুপার দাম পড়বে ১ হাজার ৬৩৩ টাকা।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়। তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। ২০০০ সালে সোনার ভরি বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে এই মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়ে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় ওঠে। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সোনার দাম প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে।
মূলত করোনা মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন ‘সেফ হ্যাভেন’বা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়ে।
গত বছরের শেষ দিকে সোনার দাম কিছুটা কমে। চলতি বছর আবার দামি এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে।
গত মে মাসে আবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারে পৌঁছায়। তারপর দাম নিম্নমুখী থাকলেও চলতি মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে।
বাজুসের নেতারা বলেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। অন্যদিকে স্থানীয় টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশের বাজারে সোনার ভরি লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজার
গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) সোনা ১ হাজার ৯৯২ ডলার ৬২ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।
২৬ অক্টোবর রাতে বাজুস যখন সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৮৭ ডলার ১৩ সেন্ট।
বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র এই পণ্যটির দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। এটি কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই।
সে কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু-এই নিশ্চয়তা দেয় না।
কমেন্ট