অবশেষে ডিম এলো
রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাশের দেশ ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের প্রথম চালন দেশে ঢুকেছে। ছবি: এআরএইচ ডট নিউজ
দামে লাগাম টানতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আমদানি করা ডিম দেশে আসতে শুরু করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাশের দেশ ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের প্রথম চালন দেশে ঢুকেছে।
দেশে সরকার নির্ধারিত দর ১২ টাকাতেও ডিম পাওয়া না গেলেও শুল্কসহ ভারত থেকে আসা ডিমের দাম পড়েছে ৭ টাকা ৯ পয়সা।
এই ডিম নিয়ে এসেছে রিপা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান; যাদেরকে গত ২১ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ফার্মের ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা দর ১২ টাকা বেঁধে দেওয়ার তিন দিন পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়। তবে প্রথম যাদের আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, তারা এখনও ডিম আনেনি।
এখন পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানিকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানটি আনতে পারবে এক কোটি ডিম।
এই খবরে কিছুদিন বাজারে ডিমের দাম কমলেও পরে নানা জটিলতায় আমদানিতে বিলম্বের কারণে আবার দাম বেড়ে যায়।
বেনাপোল শুল্ক ভবনের কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা কলি মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, “রোববার সন্ধ্যার পর ডিমের চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এর আমদানি মূল্য ৩ লাখ ২৮ হাজার ২২০ টাকা।”
রিপা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শেখ আল মামুন আহমেদ বলেন, “বন্দর পর্যন্ত প্রতিটি ডিমের আমদানি খরচ পড়েছে ৫ টাকা ২৯ পয়সা। প্রতিটি ডিমের জন্য শুল্ক গুনতে হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে বন্দর পার হওয়ার পর ডিমের দাম দাঁড়াচ্ছে প্রতিটি ৭ টাকা ৯ পয়সা।”
বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এম ই এন্টারপ্রাইজ পণ্য চালানটি ছাড় করানো জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কাস্টমসে জমা দিয়েছে।”
ডিম আসতে দেরি যে কারণে
আমদানিকারকরা বলছেন, বার্ড ফ্লু ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সনদ, উচ্চ হারে শুল্ক ও ভারতের বাজার থেকে অন্য দেশে রপ্তানির অনুমোদন না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়েছেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমদানির অনুমোদন পাওয়া প্রাইম এনার্জির স্বত্ত্বাধিকারী ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, “ইনফ্লুয়েঞ্জা সনদ নিয়ে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা গ্রুপভিত্তিক একটা সমাধান করেছে। এখন গ্রুপভিত্তিক সমাধান নিয়েও আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে সেটাও সলভ করে দেওয়া হবে।
“ইনফ্লুয়েঞ্জার সার্টিফিকেটের শর্তটা যতক্ষণ না শিথিল করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ ডিম আমদানি করতে পারবে না। এটা হল মূল কথা।”
প্রথম দফায় ডিম আমদানির অনুমোদন পাওয়া মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক ইয়ার হোসেন বলেন, “শুরুতে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমোদন পেতে আমাদের একটু সমস্যা হয়েছিল। ওরা পারমিশন দিচ্ছিল না। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মধ্যস্ততা করে গত পরশু দিন পারমিশন আদায় করে। এখন এই সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেশে নিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করব। তবে এই সপ্তাহে না পারলে আগামী সপ্তাহে।”
৩৩ শতাংশ শুল্ক নিয়েও আপত্তি আছে এই আমদানিকারকের। তিনি বলেন, “এটা আসলে অতিরিক্ত। তারা আমাদের বলেছে আপনারা আগে এই শুল্কের ওপর এক চালান নিয়ে আসেন। তারপর শুল্কের বিষয়ে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হবে।
“সরকার চাচ্ছে মানুষকে সুলভ মূল্যে ডিম খাওয়াতে। তাহলে এখানে শুল্ক বসিয়ে রাখার কী দরকার? শুল্ক উঠিয়ে দেন, মানুষ ৮/৯ টাকা করে ডিম খাবে।”
বাজারে বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে
আমদানির উদ্যোগের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহায়তায় প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ট্রাকে করে ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এর ফলে গত কয়েকদিন ধরে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১৩ থেকে ১৪ টাকায় উঠে গিয়েছিল।
এরপর বাজারে প্রতিটি ডিম ১২ টাকা দরে বিক্রি হতে থাকলে ট্রাকের বিপণনে দাম কমিয়ে ১১ টাকা থেকে ১১ টাকা ৫০ পয়সায় নিয়ে আনা হয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, রোববার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি (চারটি) ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া ও হাতিরপুল বাজারে এই দামে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার রোববার রাতে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বাজারে দাম কমে যাওয়ার পর ট্রাক সেলের দামও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক হাজার ডিম নিলে প্রতিটি ১০ টাকা ৫০ পয়সায় দিচ্ছি।
“আমাদের প্রধান টার্গেট ছিল বাজারকে একটা মেসেজ দেওয়া। খামারিও যাতে বেশি মূল্য নিতে না পারে, তাদের যেন লোকসান না হয়, আবার কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী যাতে অতি মুনাফা করতে না পারে। এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশে আর ডিম আমদানির প্রয়োজন হবে না।”
কমেন্ট