তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে নেমেছে
বুধবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলারের নিচে ৭৯ ডলার ৪৯ সেন্টে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নেমেছে ৭৫ ডলার ২৫ সেন্টে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর; জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে নেমে এসেছে।
মঙ্গলবারের পর বুধবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হয়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ধাক্কায় নানা অনিশ্চতায় গত এক মাসে তেলের দাম ৬ শতাংশের মতো বেড়েছিল; অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তবে স্বস্তির খবর এই যে, তেলের দাম ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর আগের চেয়েও কমে দামে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার এক দিনেই দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলের দামই ৪ শতাংশের বেশি কমেছিল। বুধবার কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ ডলার ১২ সেন্ট বা ২ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ৮০ ডলারের নিচে ৭৯ ডলার ৪৯ সেন্টে নেমে এসেছে।
সেই সঙ্গে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ ডলার ১২ সেন্ট কমে ৭৫ ডলার ২৫ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আগের দিন মঙ্গলবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৫৩ সেন্ট বা ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ কমে ৮১ ডলার ৬৫ সেন্টে নেমে এসেছিল।
ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৩ ডলার ৪১ সেন্ট কমে ৮০ ডলারের নিচে—৭৭ ডলার ৪১ সেন্টে নেমে এসেছিল। শতাংশ হিসাবে কমেছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
রয়টার্স বলছে, জ্বালানি তেলের এই দাম চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববাজারে এই দরে তেল বিক্রি হয়েছিল।
৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়। টানা কয়েক দিন কমতে কমতে ৬ অক্টোবর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৪ ডলারের নিচে নেমে আসে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।
ওই দর ছিল ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। মার্চ মাসে তেলের দাম এই পর্যায়ে ছিল।
তার আগে কয়েক দিন টানা বাড়তে বাড়তে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উঠেছিল ৯৩ ডলারে।
বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে চাহিদা কমার আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দরে পতন হচ্ছে। চীনের রপ্তানি বেশ কমেছে। যার প্রভাবে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া জ্বালানি তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। এই খবরও তেলের দাম কমার একটি কারণ বলে মনে করছে রয়টার্স।
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।
অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।
এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কমেন্ট