মাত্র ৬২ হাজার ডিম ভেঙে দিলো সিন্ডিকেট, এখন মিলছে ১০ টাকায়
১৫ টাকার ডিম ৫ টাকা কমে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিম।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা চার কোটি। সেপ্টেম্বরে প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকায় উঠে গিয়েছিল।
দামের লামাম টানতে তখন তিন দফায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। সেই ডিমের মধ্যে মাত্র ৬২ হাজার দেশে এসেছে।
আর তাতেই বাজারে ডিমের দামে বড় পতন হয়েছে। ১৫ টাকার ডিম ৫ টাকা কমে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিম।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, ভারত থেকে আমদানি করা মাত্র ৬২ হাজার ডিম ভেঙে দিয়েছে সিন্ডিকেট। পাাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা বলছেন একই কথা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, রোববার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারেও এই দামে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শেওড়াপাড়া বাজারের ডিম বিক্রেতা সবুজ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “তিন দিন আগেও প্রতি ডজন লাল ফার্মের মুরগির ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ (রোববার) সকালে বিক্রি করছি ১২৫ টাকায়। সন্ধ্যায় বিক্রি করেছি ১২০ টাকায়।”
“এভাবে ডিমের দাম কমবে ভাবতেও পারিনি। ভারত থেকে ডিম আসার পর থেকেই ডিমের দাম কমছে। যারা ডিম মজুত করে রেখেছিল, তারা এখন বিক্রি করে দিচ্ছে। বাজারে এখন প্রচুর ডিম। তাই পাইকারি বাজারে দাম কমছে। আমরা কম দামে কিনছি; বিক্রিও করছি কম দামে,” বলেন সবুজ।
সবুজের দোকানে ডিম কিনতে এসেছিলেন সারোয়ার নামের এক ক্রেতা। ডিমের ডজন ১২০ টাকা শুনে বলছেন, “ভালোই তো…অনেকটা কমেছে। মাত্র ৬২ হাজার ভারতীয় ডিম সিন্ডেকেট ভেঙে দিয়েছে। এখন আমরা কম দামে কিনতে পারছি।”
দামে লাগাম টানতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ নভেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাশের দেশ ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের প্রথম চালন দেশে আসে।
শুল্কসহ ভারত থেকে আসা প্রতিটি ডিমের দাম পড়েছে ৭ টাকা ৯ পয়সা। এই ডিম নিয়ে এসেছে রিপা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান; যাদেরকে গত ২১ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ফার্মের ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা দর ১২ টাকা বেঁধে দেওয়ার তিন দিন পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়। তবে প্রথম যাদের আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়, তারা এখনও ডিম আনেনি।
এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানটি আনতে পারবে এক কোটি ডিম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আগে ১০০০ ডিম পাওয়া যেতো না। এখন আবার অভাব নেই। আমরা ১০০ লাল ডিম বিক্রি করছি ৮৮০ টাকায়। আর সাদা ডিম ৮৪০ টাকায় বিক্রি করছি।”
সরকার মোট ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বিপরীতে দেশে এসেছে মাত্র ৬২ হাজার। তাতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ সিন্ডিকেটের কপালে। আমদানিকারকরা বলছেন, নানা কারণে আমদানি প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলেও কেটেছে সেই সঙ্কট।
রিপা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শেখ আল মামুন আহমেদ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমরা যে ৬২ হাজার ডিম আমদানি করেছি, তাতে বন্দর পর্যন্ত প্রতিটি ডিমের আমদানি খরচ পড়েছে ৫ টাকা ২৯ পয়সা। প্রতিটি ডিমের জন্য শুল্ক গুনতে হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে বন্দর পার হওয়ার পর ডিমের দাম দাঁড়াচ্ছে প্রতিটি ৭ টাকা ৯ পয়সা।”
তিনি বলেন, “সরকার শুল্ক কমালে আরও কম দামে দেশের মানুষ ডিম পাবে। আমাদের বাকি ডিম আমদানির সব প্রস্তুতি শেষ। দু-একদিনের মধ্যেই চলে আসবে।“
“ডিম আসতে শুরু করেছে। যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল, তারা দেখছে। তারা বুঝে গেছে, ডিম আসতে কোনও বাধা নেই। ফলে আর দাম বাড়াবে বলে মনে হয় না।”
গেলো মাস তিনেক ধরে প্রতি পিস ডিম গড়ে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ১১টাকায়। বর্তমানে যা নেমেছে ৮ টাকায়। ফলে প্রতি ডিমে অন্তত ৩ টাকা বেশি নেয়ায় এই ৩ মাসে ক্রেতাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্তত হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এই যে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যে সিন্ডিকেট চক্র—তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।”
আইন প্রয়োগে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট ভাঙতে শুধু ডিম নয়, যেকোনো পণ্যের আমদানি উন্মুক্ত রাখা উচিত। সিন্ডিকেট ভয় পেয়েছে। তারা মনে করছে, ডিমের আমদানি উন্মুক্ত রাখলে আর দাম বাড়ানো যাবে না। শুধু ডিম নয়, অন্যান্য পণ্যের আমদানিও উন্মুক্ত রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।”
কমেন্ট