সোনার ভরি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় উঠল
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।
সোনার দাম বেড়েই চলেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। তিন দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে আরও ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
এর ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা বৃহস্পতিবার থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকায় বিক্রি হবে।
বুধবার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য মানের সোনার দরও একই হারে বাড়ছে।
বুধবার রাতে বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার থেকে সারা দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনা ৯ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম হিসাবে এক ভরির দাম পড়বে প্রায় এক লাখ ৮ হাজার ১০ হাজার টাকা। এই দর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে টানা তিন দফা মূল্যবান এই ধাতুর দাম কমানোর পর গত ১১ অক্টোবর ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরের দিন ১২ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।
এর পর ১৫ অক্টোবর ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।
২৬ অক্টোবর ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৪৪ টাকা করা হয়। ২৭ অক্টোবর থেকে যা কার্যকর হয়।
৫ নভেম্বর বাড়নো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা করা হয়। ৬ নভেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
১৮ নভেম্বরও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয় । ১৯ নভেম্বর থেকে নতুন ওই দর কার্যকর হবে।
২৬ নভেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়। যা ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
সবশেষ বুধবারও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়েছে। যা বুধবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।
চলতি বছরের ২০ জুলাই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২২ ক্যারেট সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। তখন ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭৭ টাকা। মাঝে কিছুটা কমলেও ১৬ অক্টোবর আবার লাখ টাকা ছাড়ায়।
জুয়েলার্স সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের পাশাপাশি অন্যান্য মানের সোনার দামও বেড়েছে। হলমার্ক করা ২১ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ভরিতে ১ হাজার ৬৩৩ টাকা। এই মানের প্রতি ভরি সোনা বুধবার থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫৯ টাকায় বিক্রি হবে।
১৮ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৮৯ হাজার ৯২৯ টাকা ভরিতে; বেড়েছে ১ হাজার ৪৫৮ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ২২৫ টাকা। বিক্রি হবে ৭৪ হাজার ৯৪১ টাকা।
তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের রুপার দাম (ভরি) ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ১৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১০৫০ টাকা পড়বে।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়। তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। ২০০০ সালে সোনার ভরি বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে এই মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়ে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় ওঠে। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সোনার দাম আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে।
মূলত করোনা মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন ‘সেফ হ্যাভেন’বা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়ে।
গত বছরের শেষ দিকে সোনার দাম কিছুটা কমে। চলতি বছর আবার দামি এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে।
গত মে মাসে আবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারে পৌঁছায়। তারপর দাম নিম্নমুখী থাকলেও গত মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে।
বাজুসের নেতারা বলেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। অন্যদিকে স্থানীয় টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স ফের ২০৪২ ডলার
গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৭টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) সোনা ২ হাজার ৪২ ডলার ২ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।
২৬ নভেম্বর রাতে বাজুস যখন সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ২ ডলার ৩৮ সেন্ট।
বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র এই পণ্যটির দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। এটি কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই।
সে কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু-এই নিশ্চয়তা দেয় না।
কমেন্ট