সোনার দাম কমল ভরিতে ১৭৫০ টাকা

সোনার দাম কমল ভরিতে ১৭৫০ টাকা

বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা ১ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকায় বিক্রি হবে। বুধবার পর্যন্ত এই মানের সোনা সোনা ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সোনার দাম কমছে। টানা কয়েক দফা বাড়ানোর দুই মাস পর বুধবার মূল্যবান এই ধাতুর দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।

এর ফলে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা ১ লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকায় বিক্রি হবে। বুধবার পর্যন্ত এই মানের সোনা সোনা ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে কমেছে।

বুধবার রাতে বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনা ৯ হাজার ২৭০ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম হিসাবে এক ভরির দাম পড়বে এক লাখ ৮ হাজার ১২৫ টাকা।

এর আগে টানা তিন দফা মূল্যবান এই ধাতুর দাম কমানোর পর গত ১১ অক্টোবর ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরের দিন ১২ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।

এর পর ১৫ অক্টোবর ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়। ২৬ অক্টোবর ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৪৪ টাকা করা হয়। ২৭ অক্টোবর থেকে যা কার্যকর হয়।

৫ নভেম্বর বাড়নো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা করা হয়। ৬ নভেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়। ১৮ নভেম্বরও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয় । ১৯ নভেম্বর থেকে নতুন ওই দর কার্যকর হবে। ২৬ নভেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়। যা ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

২৯ নভেম্বরও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়। যা ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

এক সপ্তাহ পর বুধবার ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এই দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।

চলতি বছরের ২০ জুলাই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২২ ক্যারেট সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। তখন ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭৭ টাকা। মাঝে কমে লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল। ১৬ অক্টোবর বেড়ে ফের লাখ টাকা ছাড়ায়।

জুয়েলার্স সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের পাশাপাশি অন্যান্য মানের সোনার দামও বেড়েছে। হলমার্ক করা ২১ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ভরিতে ১ হাজার ৬৩৩ টাকা। এই মানের প্রতি ভরি সোনা বৃহস্পতিবার থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ২২৬ টাকায় বিক্রি হবে।

১৮ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৮৮ হাজার ৪১৬ টাকা ভরিতে; বেড়েছে ১ হাজার ৪৫৮ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ২২৫ টাকা; বিক্রি হবে ৭৩ হাজার ৭১৬ টাকা।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়। তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। ২০০০ সালে সোনার ভরি বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে এই মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়ে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় ওঠে। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সোনার দাম আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে।

মূলত করোনা মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন ‘সেফ হ্যাভেন’বা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়ে।

গত বছরের শেষ দিকে সোনার দাম কিছুটা কমে। চলতি বছর আবার এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে।

গত মে মাসে আবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারে পৌঁছায়। তারপর দাম নিম্নমুখী থাকলেও গত মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে।

এম এ হান্নান আজাদ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। অন্যদিকে স্থানীয় টাকার বিপরীতে ডলারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশের বাজারেও সোনার দাম বেড়েছিল।

“গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমেছে। সে কারণে দেশের বাজারেও কমানো হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক বাজার

গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম খানিকটা কমেছে। টানা বাড়তে বাড়তে গত ১ ডিসেম্বর প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) সোনার দাম ২ হাজার ৭১ ডলারে উঠেছিল।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৭টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ২৮ ডলার ৮৩ সেন্ট।

গত ২৯ নভেম্বর রাতে বাজুস যখন সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৪২ ডলার।

বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র এই পণ্যটির দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। এটি কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই।

সে কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু-এই নিশ্চয়তা দেয় না।

অপরিবর্তিত রুপার দর

তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের মতোই ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ১ হাজার ৭১৫ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ হাজার ৬৩৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হবে।

সোনার ভরি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় উঠল পরবর্তী

সোনার ভরি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় উঠল

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর