পেঁয়াজের দাম বেড়ে একদিনে ২০০ টাকা কীভাবে হয়, প্রশ্ন বাণিজ্য সচিবের

পেঁয়াজের দাম বেড়ে একদিনে ২০০ টাকা কীভাবে হয়, প্রশ্ন বাণিজ্য সচিবের

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করে বলেছেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে, এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।

তিনি প্রশ্ন করেছেন, পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা কীভাবে হয়। এটা কি ধরনের ব্যবসা।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য সচিব বলেন, “ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে, এই দেশের জনগণের জন্য তাদের ব্যবসা। অবশ্যই তারা লাভ করবেন, লাভ ছাড়া কেউ ব্যবসা করবেন না। অথচ যে পণ্য কাল পর্যন্ত ১০০ টাকায় কিনে ১২০ টাকায় বিক্রি করছিলেন, সেই পণ্য একদিনে ২০০ টাকা কীভাবে হয়ে যায়?”

“ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করেছে। এজন্য পরের দিনই এই পরিমাণ দাম বাড়তে পারে না। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও এটা দেখা যায়। যখনই রপ্তানি বন্ধ থাকে, অনেক ব্যবসায়ী তখন সুযোগ নিয়ে থাকেন।”

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, রোববার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।

তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।

শনিবার এই বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

শেওড়াপাড়া বাজারের রায় ট্রেডার্স মুদি দোকানের মালিক রিপন রায় এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণে শুক্র ও শনিবার ঘন্টায় ঘন্টায় দাম বেড়েছিল। তবে আজ ২০০ টাকা বিক্রি করছি।”

টিসিবির প্রতিদিনের বাজার দর ঘেঁটে দেখা যায়, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা।

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। ঘোরাফেরা করেছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকায়। কিন্তু পাশের দেশ ভারত গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত তারা কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। এরই প্রভাবে মসলা পণ্যটির দাম হুহু করে বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলা হয়েছিল।

তার আগেই দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি একেবারে বন্ধ করে দিল। যদিও কোনো দেশের সরকার অনুরোধ করলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের বেশি। গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টনের মতো। তবে ক্ষেত থেকে তুলে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে।

এ জন্য ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে অথবা শুল্ক বাড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে প্রভাব পড়ে। যেমনটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশে রেকর্ড ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল কেজি।

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।”

দামের লাগাম টেনে ধরতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। সংবাদ সম্মেলন করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি খুচরা পর্যাযয়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন।

কিন্তু গত চার মাসে দেশে কোথাও বেধে দেওয়া এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

বিরূপ আবহাওয়ায় ফলন ভালো না হওয়ায় এবছর ভারতের বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সে কারণে গত অগাস্টে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শূল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করে ভারত।

এরপর ২৮ অক্টোবর পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৮০০ ডলারে বেঁধে দিয়ে আদেশ জারি করে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার জানানো হয়, ন্যূনতম রপ্তানিমূল্যের ওই সীমা আরও তিন মাস, অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর রপ্তানিই বন্ধ করার ঘোষণা এল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের খুচরা বাজারে বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে।

স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশও বছরের অধিকাংশ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে। তবে মওসুমের শেষ দিকে এসে দাম বেড়ে গেলে আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে সরকার।

চলতি বছরর জুনে পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উঠে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ উন্মুক্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা, ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে পরবর্তী

পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা, ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর