বিশ্ববাজারে তেলের দামে ধস, ৭০ ডলারে নেমেছে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে তেলের চাহিদা কমার আশঙ্কায় দামে ধস নেমেছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর; জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৭০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে তেলের চাহিদা কমার আশঙ্কায় দামে ধস নেমেছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার বা ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ কমে ৭০ ডলারের নিচে ৬৮ ডলার ৩৪ সেন্টে নেমে এসেছে।
সেই সঙ্গে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৩ সেন্ট বা ৪ শতাংশ কমে ৭৩ ডলারে নেমে এসেছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ধাক্কায় নানা অনিশ্চতায় তেলের দাম ৬ শতাংশের মতো বেড়েছিল; অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
তবে কয়েক দিনের মধ্যেই তেলের দাম ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর আগের চেয়েও কমে দামে নেমে আসে।
ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের নিচে ৭৯ ডলার ৪৯ সেন্টে নেমে আসে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নেমে আসে ৭৫ ডলারে।
৭ অক্টোবর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়। টানা কয়েক দিন কমতে কমতে ৬ অক্টোবর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮৪ ডলারের নিচে নেমে আসে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম নামে ৮২ ডলারে।
তার আগে কয়েক দিন টানা বাড়তে বাড়তে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৯৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উঠেছিল ৯৩ ডলারে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বর মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। যার ফলে দেশটির মূল্যস্ফীতি ফের ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ফেডারেল রিজার্ভ নতুন বছরের শুরুতেই সুদের হার আরেক দফা বাড়াতে পারে।
“আর সেটা হলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে; ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা কমবে। সে আশঙ্কায় তেলের দামে বড় পতন হচ্ছে,” বলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ নিউইয়র্কের অ্যাগেইন ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের অংশীদার জন কিল্ডফ।
বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।
অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।
এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কমেন্ট