সোনার ভরি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা ছাড়াল

সোনার ভরি ১ লাখ ১১ হাজার টাকা ছাড়াল

রোববার থেকে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের সোনা ১ লাখ ১১ হাজার ২৬ টাকায় বিক্রি হবে। শনিবার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ টাকায়।

সোনার দাম বাড়ছেই; রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।

রোববার থেকে দেশের বাজারে এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনা ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকায় বিক্রি হবে। শনিবার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে।

টানা সাত দফা বাড়ানোর পর গত ৬ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমিয়েছিল বাজুস।

১২ দিনের ব্যবধানে ১৮ ডিসেম্বর সেই সোনার দাম আবার ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। শনিবার বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

শনিবার রাতে বাজুসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোববার থেকে সারা দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম সোনা ৯ হাজার ৫২০ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি ভরি ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম হিসাবে এক ভরির দাম পড়বে এক লাখ ১১ হাজার ২৬ টাকা।

এর আগে টানা তিন দফা মূল্যবান এই ধাতুর দাম কমানোর পর গত ১১ অক্টোবর ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরের দিন ১২ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়।

এর পর ১৫ অক্টোবর ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ানো হয়। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই দর কার্যকর হয়। ২৬ অক্টোবর ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৪৪ টাকা করা হয়। ২৭ অক্টোবর থেকে যা কার্যকর হয়।

৫ নভেম্বর বাড়নো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা করা হয়। ৬ নভেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়। ১৮ নভেম্বরও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয় । ১৯ নভেম্বর থেকে নতুন ওই দর কার্যকর হবে। ২৬ নভেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়। যা ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

২৯ নভেম্বরও ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়নো হয়। যা ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।

এক সপ্তাহ পর ৬ ডিসেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা কমানো হয়। ৭ ডিসেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়।

১৮ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা। ১৯ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয় ওই দর।

বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।

চলতি বছরের ২০ জুলাই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২২ ক্যারেটের সোনার দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়েছিল। তখন ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭৭ টাকা।

মাঝে কমে লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল। ১৬ অক্টোবর বেড়ে ফের লাখ টাকা ছাড়ায়।

জুয়েলার্স সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের পাশাপাশি অন্যান্য মানের সোনার দামও বেড়েছে। হলমার্ক করা ২১ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ভরিতে ১ হাজার ৬৯১ টাকা। এই মানের প্রতি ভরি সোনা রোববার থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকায় বিক্রি হবে।

১৮ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৯০ হাজার ৮৬৩ টাকা ভরিতে; বেড়েছে ১ হাজার ৪৫৮ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৬৬ টাকা; বিক্রি হবে ৭৫ হাজার ৬৯৯ টাকায়।

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়। তার আগের বছর সোনার ভরি ছিল ১৫৪ টাকা। ২০০০ সালে সোনার ভরি বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১০ সালে এই মূল্যবান ধাতুর দাম বেড়ে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় ওঠে। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে সোনার দাম আড়াই গুণের বেশি বেড়েছে।

মূলত করোনা মহামারীর পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন ‘সেফ হ্যাভেন’বা ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

এতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়ে।

গত বছরের শেষ দিকে সোনার দাম কিছুটা কমে। চলতি বছর আবার মূল্যবান এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে।

গত মে মাসে আবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারে পৌঁছায়। তারপর দাম নিম্নমুখী থাকলেও গত মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে।

আন্তর্জাতিক বাজার

গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম খানিকটা বেড়েছে। টানা বাড়তে বাড়তে গত ১ ডিসেম্বর প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) সোনার দাম ২ হাজার ৭১ ডলারে উঠেছিল।

শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৫০ ডলার ১২ সেন্ট।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে বাজুস যখন সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ২৫ ডলার ১২ সেন্ট।

বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র এই পণ্যটির দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। এটি কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই।

সে কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু-এই নিশ্চয়তা দেয় না।

রুপার দাম অপরিবর্তিত

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল রূপার দর। ১৮ ডিসেম্বর সোনার সঙ্গে রূপার দামও বাড়ানো হয়।

তবে শনিবার রূপার দাম বাড়ানো হয়নি। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।

ভরা মৌসুমেও স্বস্তি নেই শীতের সবজিতে পরবর্তী

ভরা মৌসুমেও স্বস্তি নেই শীতের সবজিতে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর