বিশ্ববাজারে কমেছে তেলের দাম

বিশ্ববাজারে কমেছে তেলের দাম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন হয়েছে। অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দর ৭৩ ডলারে নেমেছে।

লোহিত সাগর দিয়ে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানি আবার জাহাজ চালানো শুরু করায় বুধবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে; যদিও আগের দিন মঙ্গলবার তেলের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৬৩ সেন্ট বা ২ দশমিক শূন্য এক শতাংশ কমে ৭৯ ডলার ৪৪ সেন্টে নেমে এসেছে।

সেই সঙ্গে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ১ ডলার ৭৪ সেন্ট কমে ৭৯ ডলার ৪৪ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এর আগে মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম ২ শতাংশের বেশি বেড়ে চলতি মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। আগের সপ্তাহেও তেলের দাম বেড়েছিল এবং তার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও দাম বেড়েছিল।

গত সপ্তাহে তেলের দাম ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। আর এর কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাতে যাচ্ছে—এই আশায়। অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে, নীতি সুদহার কমানো হলে প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া লাগবে ও চাহিদা বাড়বে।

লোহিত সাগর দিয়ে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানি জাহাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেই সঙ্গে লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলার আশঙ্কাও শেষ হয়ে যায়নি।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হারজি হালেভি সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ আরও অনেক দিন চলতে পারে। অন্যদিকে ইয়েমেনের ইরান–সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে কনটেইনারবাহী একটি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে।

হুতি বিদ্রোহীদের এ হামলা সত্ত্বেও লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক টাস্কফোর্স টহল শুরু করায় মায়ার্সক ও ফ্রান্সের সিএমএ সিজিএমের মতো বড় জাহাজ কোম্পানিগুলো ওই সাগরপথে আবারও জাহাজ চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এত কিছু সত্ত্বেও বাজারে খবর চাউর হয়েছে যে ফেডারেল রিজার্ভ ২০২৪ সালে নীতি সুদহার কমাতে শুরু করবে। গত শুক্রবার ফেডের তথ্যে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত ভোগব্যয় সূচকের নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী, নীতি সুদহার কমানো হলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার কমবে এবং অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে। তখন তেলের চাহিদাও বাড়বে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুত গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ২৬ লাখ ব্যারেল কমেছে; যদিও গ্যাসোলিনের মজুত কিছুটা বেড়েছে। রয়টার্সের এক প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করছিল, ঠিক তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তেলের দাম। একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এর পর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল।

মে মাসের শেষের দিকে তেলের দাম বেড়ে ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। 

এর পর থেকে অবশ্য তেলের দাম নিম্মমূখীই ছিল। কমতে কমতে গত জুন মাসে দুই ধরনের তেলের ব্যারেলই ৭০ ডলারের নিচে নেমে আসে।

২০২০ সালের করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানি তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে। 

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে-তে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার।

অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।

এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের কারণে ফের তা বাড়তে থাকে। ইউক্রেনে রুশ হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

সোনার ভরি ১৫৪ থেকে ১১১০০০ টাকায় উঠার গল্প পরবর্তী

সোনার ভরি ১৫৪ থেকে ১১১০০০ টাকায় উঠার গল্প

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর