বাণিজ্য মেলা শুরু রোববার, বাড়ছে প্রবেশমূল্য
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য কিছুটা পিছিয়ে রোববার শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। মেলা শুরুর একদিন আগেও চলছে স্টল বানানোর কাজ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য তিন সপ্তাহ পিছিয়ে শুরু হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে রোববার। এবার মেলার স্টল ও প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার ২৮তম আসরটি উদ্বোধন করবেন।
গত দুই আসরের মত এবারও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মাসব্যাপী এ মেলা উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। দেশি-বিদেশি পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এই আসরটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।
সাধারণত খ্রিস্টিয় বর্ষপঞ্জির প্রথমদিন থেকে মেলা শুরু হলেও এবার সংসদ নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত সময়ের ২০ দিন পিছিয়ে মেলা শুরু হচ্ছে।
ইপিবি বলছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করবে।
পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজারও হয়ে দাঁড়ায় এই মেলা। এবারের মেলায় স্টলের সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্যও।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ও বাণিজ্যমেলার এ আসরের পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, “এ বছর মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এবার দেশি-বিদেশি ৩৫০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি-প্যাভিলিয়ন থাকবে। যা গতবছর ছিল ৩৩১টি।”
এদিকে গতবছর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মেলায় প্রবেশমূল্য ৪০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সিদের জন্য ২০ টাকা ছিল। যা এবার বেড়ে যথাক্রমে ৫০ টাকা ও ২৫ টাকা করা হয়েছে।
শনিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু থেকে উত্তর দিকে কিছু দূর এগিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্টলগুলোতে শেষ সময়ের ব্যস্ততা দেখা যায়।
এবার মেলার প্রধান ফটক তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) আদলে। যা গতবছর ছিল মেট্রো রেলের আদলে।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হল ছাড়াও সামনে ও পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল নির্মাণ ও রঙের কাজে ব্যস্ত পাওয়া যায় নির্মাণ শ্রমিকদের। কিছু স্টলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় রং ও পণ্যের পসরা সাজাতে দেখা গেছে।
মেলায় অংশ নেওয়া জারিন ফ্যাশনের প্রতিনিধি রনি হোসাইন বলেন, “এবার স্টল নির্মাণ ও সাজাতে সময় কম পেয়েছি। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছি। দিন-রাত নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করেছেন। আমাদের স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। বাকি যা আছে তা বিকালের আগেই শেষ করা যাবে।”
একই কথা বলেন অলিম্পিক প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সেলিম আহমেদ।
তবে তিনি জানান, গত দুই বছর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আসতে এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) সড়কের যানজট তাদের ও দর্শনার্থীদের ভুগিয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ এখনও চলমান থাকায় এবারও একই সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে আশঙ্কা তার।
যদিও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব বিবেক সরকার বলেন, “সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বিকল্প সড়কগুলো নিয়মিত সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাজধানীর ফার্মগেট ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সরাসরি মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য আলাদা বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় আসতে ফার্মগেট থেকে ৭০ টাকা ও কুড়িল থেকে ৩৫ টাকা মূল্যের টিকিট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের।
“দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুরো মেলা প্রাঙ্গণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”
গত বছর মেলায় ৩০/৩৫ লাখ দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া পাওয়া গেছে ৩০০ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক অর্ডার রপ্তানি আদেশ।
এ বছর দর্শনার্থী ও লেনদেন দুটোই বাড়বে বলে আশা আয়োজকদের।
গত ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেলা শুরুর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২১ জানুয়ারি।
কমেন্ট