এখন আমাদের কূটনীতি হবে অর্থনীতি: প্রধানমন্ত্রী
এখন থেকে রাজনীতি নয়, অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার পূর্বাচলে রবিবার ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্য তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি কূটনৈতিক মিশনে আমরা এই মেসেজটাই দিয়েছি যে, এখন আর রাজনৈতিক না, এখন আমাদের ডিপলোমেসি যেটা হবে অর্থাৎ এখন আমাদের কূটনীতি হবে অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কীভাবে আমরা ঘটাব, সেটার ওপরেই আমাদের কূটনৈতিক বিষয়গুলো কাজ করছে, কাজ করবে। সেটাই আমরা চাচ্ছি।”
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন পণ্য অন্তর্ভুক্তিকরণ, বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে প্রতি বছর বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
১৯৯৫ সাল থেকে এ ধরনের মেলার আয়োজন করে আসছে সংস্থাটি। ২০২২ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রপ্তানিতে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটা-দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না। আমাদেরকে রপ্তানি বহুমুখী করতে হবে। এটা আমি বারবার বলছি। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা যে পণ্যগুলোকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি তারাই খুব বেশি সাফল্য বয়ে আনছে। তাহলে আমাদের অন্যান্য পণ্যগুলো কেন বাদ যাবে? তাদেরকেও আমাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলে তারাও ভালো ব্যবসা করবে।”
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ হিসেবে তৈরি পোশাকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের নিট ও ওভেন গার্মেন্ট বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের সুযোগ আছে পাট ও পাটজাত পণ্যের মতো পরিবেশবান্ধব পণ্য বিশ্ববাজারে আরও বেশি চাহিদা সৃষ্টি করে রপ্তানি বৃদ্ধি করার।”
একইভাবে চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রেও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য তিনি গবেষণা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “পাট ও চামড়ার সংমিশ্রণেও অনেক বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি হয়। এ ধরনের পণ্যের বিরাট বাজার বিশ্বব্যাপী রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা গার্মেন্ট খাতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি, অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমাদের সেই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। পাট, চামড়া, ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আমরা কিন্তু যথেষ্ট অগ্রগামী। এছাড়াও আমাদের আরও অনেক পণ্য আছে যেগুলো রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু খুব সীমিত আকারে। সেগুলো খুঁজে বের করে আমাদের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এর মধ্যে ১৫-১৮টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান প্রমুখ।
উদ্বোধনের পর মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন মেলায়।
কমেন্ট