‘এসএমএসের মাধ্যমে ডিম, মুরগির মতো চালের দামও বাড়ানো হচ্ছে’
সফিকুজ্জামান বলেছেন, পেঁয়াজ, আলুর পর চালের বাজারকেও অস্থির করে তুলে ভোক্তাদের প্রতারিত করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে ১৫ দিনের ব্যবধানে আগের মজুত ধানের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক, এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার বাজারে মোট চালের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে সরু চালের দাম। আর মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।
আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কারণ জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এসএমএসের মাধ্যমে ডিম, ব্রয়লার মুরগির মতো চালের বাজারকে অস্থির করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেছেন, পেঁয়াজ, আলুর পর চালের বাজারকেও অস্থির করে তুলে ভোক্তাদের প্রতারিত করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে ১৫ দিনের ব্যবধানে আগের মজুত ধানের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক, এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে।
শনিবার বেলা ১১টাযর দিকে বরিশাল নগরীর ফরিয়াপট্টি, চকবাজার এলাকার পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে চালের বড় বড় কয়েকশ কল আছে, তারা কীভাবে একইভাবে জোটবদ্ধ হয়। তাহলে এখানেও এসএমএসের মাধ্যমে ডিম, ব্রয়লার মুরগির মতো গোটা চালের বাজারকে অস্থির করে দেওয়া হচ্ছে।
“আর এটা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় কার্যক্রম নেব। অর্থাৎ একজোট হওয়া কিংবা একজনে দাম বাড়িয়েছে, সেজন্য বাকিরা আমরাও বাড়িয়েছি এই জিনিসগুলোকে বন্ধ করা যায়।”
সফিকুজ্জামন বলেন, “মাঝে মাঝে সুযোগ নিয়ে ১৭ কোটি ভোক্তাকে প্রতারিত করছে ক্ষুদ্র কয়েকটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এর আগে আলু, বয়লার মুরগি, ডিম নিয়ে যা করছে; আজ চাল, কাল পেঁয়াজ নিয়েও তা করা হচ্ছে, আর এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে আমাদের।
“মোকামে চালের দাম বাড়ানোর পেছনে একটি চক্র সারাদেশে ধানের দাম বেড়েছে—এমন প্রচার করেছে। ধানের দাম যদি বেড়েও থাকে সেই চালটা তো দুই মাস পরে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে বাজারে আসবে। কিন্তু এখন ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে ৪ টাকা বেশি দামে যে চালটা পাওয়া যাচ্ছে, তার ধানের সোর্স তো আগের সোর্সের সঙ্গে একই।”
বাজারের বর্তমান চালের ধানটা আগে কিনে মাড়াই করে বিভিন্ন জায়গায় মজুত করে রাখা বলে উল্লেখ করে ভোক্তার ডিজি বলেন, “বর্তমানে কস্টিংয়ের কোনও ডিফারেন্সও হওয়ার কথা না। কারণ ট্রাক ভাড়া, দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন বাড়েনি।
“তাহলে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে ১৫ দিনের ব্যবধানে পূর্বের ধানের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অযৌক্তিক। আর অযৌক্তিক বিষয়ের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।”
সফিকুজ্জামান বলেন, “ঠিক ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে একই মোকামের একই ভাউচারে একই চাল ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা ব্যস-কম হচ্ছে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষে যে চালটা এসেছে এবং জানুয়ারির ১০-১২ তারিখে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সেখানে ৪ টাকার ডিফারেন্স ফরিদপুর ও কুষ্টিয়ার আড়ত থেকেই হচ্ছে।”
বরিশালে তেমন কোনও ব্যত্যয় পাওয়া যায়নি, তারা যে দামে চাল কিনছে আর তার ওপর সামান্য লাভ করেই বিক্রি করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন ভোক্তার ডিজি।
“তবে এখানে (বরিশাল) হাজার হাজার চালের বস্তা রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তদন্ত করে দেখে আগের কম দামের কেনা চাল স্টক করে বাড়তি দামে বিক্রি করছে কিনা। কারণ স্টকের চাল যদি বাড়তি দামে বিক্রি হয়, সেটাও একটি বড় ঘাপলা।”
তিনি বলেন, “বরিশাল বা যেসব জায়গায় পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রি হচ্ছে, সেখান থেকে তথ্য নিচ্ছি আমরা। আর এখান থেকে তথ্য নিয়ে যে সোর্স থেকে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে তদন্ত করব। ব্যত্যয় ঘটলে প্রয়োজনে সিলগালা করে দেব, আইনের আওতায় নেব।”
এ সময় তিনি আসন্ন রমজান উপলক্ষে ডাল, চিনি, তেলসহ রমজানের পণ্য নিয়ে যাতে কেউ কারসাজি না করতে পারে সেজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে বলে জানান।
বরিশালের পাইকারি বাজারে পাওয়া খোলা ভোজ্যতেলের অপরিস্কার ড্রাম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভোক্তার ডিজি।
তিনি বলেন, “ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে লেভেল বিহীন ড্রামে করে পাম তেল, সুপার পাম এবং সয়াবিন পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দামেও বড় পার্থক্য রয়েছে।
“তবে কেউ যদি পাম নিয়ে সয়াবিনের নামে ও দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করে সাধারণ মানুষ তা জানবে না। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”
বাজার পরিদর্শন শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আয়োজনে চাল, ভোজ্য তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন ভোক্তার ডিজি।
টিসিবির প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শনিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে এই চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা। এক মাস আগে এই চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
আর সরু চাল বিক্রি হয়েছে (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৭৫ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া—এই চার বাজারেই শনিবার সব মানের চাল টিসিবির দরের চেয়ে ৩/৪ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কমেন্ট