পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল ভারত
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
স্থানীয় বাজারে দাম বাড়তি থাকায় ভারতের পেঁয়াজের আশায় ছিল বাংলাদেশ; তবে সেই আশার গুড়েবালি।
৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল ভারতের। এরপর প্রতিবেশী দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করছিল বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
তবে ভোটের আগে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়েছে ভারত সরকার। দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “৩১শে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির উপর বিদ্যমান রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।”
ভারতে উৎসবের মওসুমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং স্থানীয় বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ। গত বছর দেশটি ২৫ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যার বড় ক্রেতা এশিয়ার দেশগুলো। এক বাংলাদেশই ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছিল বলে রয়টার্সের তথ্য।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদায় ৩ লাখ টনের মতো ফারাক থাকায় মূলত ভারত থেকে আমদানি করে বাজার সামাল দেওয়া হয়।
ভারত গত বছরের ৭ ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এবার বছরের শুরুতে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমদানির তৎপরতা চালিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে বিশেষ ব্যবস্থায় ৫০ হাজার টন রপ্তানির আশ্বাস দিয়েছিল ভারত।
সেই পেঁয়াজ এখনও না আসার মধ্যে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বেড়ে গেল।
ভারত গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে। তার মধ্যে ১৮ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
নিজেদের বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভারত গত বছরের আগস্টে রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিল। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ ডলার।
কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের ব্যবসায়ীরা আশা করছিলেন যে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বরং দ্রুত তুলে নেওয়া হবে, কারণ রপ্তানি বন্ধ করার পর স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে নতুন উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে এসেছে।
তবে শুক্রবার দিন শেষে সরকার এক আদেশ জারি করে বলেছে যে রপ্তানির ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
মুম্বাইভিত্তিক এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একজন নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবাক করার মতো এবং এর কোনো দরকার ছিল না। কারণ, চলতি মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসার কারণে সরবরাহ বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে দামও কমে আসছে।”
ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মহারাষ্ট্রে। মুম্বাইয়ের ওই রপ্তানিকারক জানান, ওই রাজ্যের কিছু পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ১ হাজার ২০০ রুপিতে নেমে এসেছে। গত ডিসেম্বরে এই দাম ছিল ৪ হাজার ৫০০ রুপি।
ভারতে আগামী মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাত সপ্তাহ ধরে এই নির্বাচন চলবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভোটের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে চাইছেন।
বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করে। দিল্লি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর এই সব দেশের কয়েকটিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
মুম্বাইভিত্তিক আরেকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আরেকজন নির্বাহী রয়টার্সকে বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপের কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক রপ্তানিকারক দাম বাড়িয়ে দেবে, কারণ আমদানিকারকদের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই।
চীন ও মিসরের মতো দেশও পেঁয়াজ রপ্তানি করে। তবে ভারতের সুবিধা হলো তারা পেঁয়াজ আমদানিকারকদের কাছে পৌঁছে দিতে খুব কম সময় নেয়। ব্যবসায়ীদের ধারণা, এশিয়ার দেশগুলো প্রতিবছর যত পেঁয়াজ আমদানি করে, তার অর্ধেকের বেশি আসে ভারত থেকে।
গত অর্থবছরে ভারত ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তারি করেছিল। এটা ছিল ভারতের জন্য একটি রেকর্ড। পয়লা এপ্রিল শুরু হয়ে ভারতীয় অর্থবছর শেষ হয় ৩১ মার্চ।
কমেন্ট