সোনার দাম নিয়ে বাজুসের ‘অদ্ভুদ’ খেলা
১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িয়েছিল বাজুস। শনিবার মাত্র ৮৪০ টাকা কমিয়েছে।
সোনার দর বাড়ানো-কমানো নিয়ে ‘অদ্ভুদ’ খেলায় মেতেছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। কমানো হচ্ছে হরহামেশা; তাও আবার যৎসামান্য।
১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িয়েছিল বাজুস। শনিবার মাত্র ৮৪০ টাকা কমিয়েছে।
এক দিন আগে বৃহস্পতিবার ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়েছিল-বাজুস। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এই মাসের সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল।
দেশে এখন এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ১৮৫ টাকা লাগবে; অর্থাৎ এক ভরি সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা (১ ভরিতে ১১.৬৬৪ গ্রাম)।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও পড়েছে। ঈদের আগে দুই দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়।
৬ এপ্রিল বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। ৮ এপ্রিলও বাড়ানো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা।
ঈদের পর বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা।
শনিবার বেলা সাড়ে ৩টায় সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। সঙ্গে সঙ্গেই তা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম হ্রাস পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার বেলা ৩টা ৩০ মিনিট থেকে সারা দেশে হলমার্ক করা প্রতি ভরি ভালো মানের ২২ ক্যারেট সোনা দাম ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ১৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার ২৪২ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যায়, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ৮৪০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৮০৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটের কমেছে ৬৮৮ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৫৬০ টাকা।
দাম কমানোর আগে হলমার্ক করা প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরি ছিল ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩৯০ ডলার ৮৬ সেন্ট। এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ ডলার ৮১ সেন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার যখন সোনার দাম বাড়ানো হয় তখন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩৭৯ ডলার ৩১ সেন্ট।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল দুই হাজার ডলারের নিচে। তারপর থেকেই দাম বাড়ছে।
মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে গত দুই বছর সোনার দাম সেভাবে বাড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে, বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববাজারে সোনার দাম এখন মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়ছে।
মধ্যপাচ্যে যুদ্ধের ডামাডোলেও বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
অনিশ্চিত বিশ্বে সোনায় বিনিয়োগ বাড়ায় এর দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ডলারে পৌঁছতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক সিটি এনএ’র এক প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ছে বেশি, কমছে কম-কেনো—এ প্রশ্নের উত্তরে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। আর সেটি হচ্ছে—বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি। এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত, তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত, তখন বাড়াতাম।”
“আর এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘন্টায় ঘন্টায় ওঠানামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে—দিনে দুই বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।”
কেনো এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন—এ প্রশ্নের উত্তরে মাসুদুর রহমান বলেন, “আমরা এখন বৈধভাবে কোনো গোল্ড আমদানি করি না। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু প্রতিষ্ঠান আমদানি করলেও এখন কেউ করছে না। কেননা, ডিউটি (শুল্ক) অনেক বেশি। আমদানি করলে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বাজুসের সভাপতি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশনায় ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করছি। দেশে গোল্ড রিফাইনারি শুরু হলে এবং শুল্ক কমালে বৈধভাবে আমদানি হলে, তখন আমরা আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোল্ডোর দাম নির্ধারণ করবা।”
কমেন্ট