সোনার দাম আরও কমল

সোনার দাম আরও কমল

এখন এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ৯ হাজার ৭৯০ টাকা লাগবে; অর্থাৎ এক ভরির দাম পড়বে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা।

সোনার দাম আরও কমেছে। ২৪ ঘন্টা না যেতেই সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।

অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়েছিল। বিকেল ৪টা থেকে ওই দর কার্যকর হয়। বুধবার এই মানের সোনার দর ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমানো হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে।

দুই দিনে ভরিতে সোনার দাম কমেছে ৫ হাজার ২৩৮ টাকা।

বুধবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশে এখন এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ৯ হাজার ৭৯০ টাকা লাগবে; অর্থাৎ এক ভরি সোনার দাম পড়বে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা (১ ভরিতে ১১.৬৬৪ গ্রাম)।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।

বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হলমার্ক করা প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকায় বিক্রি হয়।

সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৯৯৪ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ১ হাজার ৭১৫ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৬ টাকা বেড়েছে।

এর আগে ২১ এপ্রিল (রোববার) দেশের বাজারে সোনার দর বাড়িয়েছিল বাজুস। ওইদিন প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬৩০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছিল ৬০৬ টাকা; ১৮ ক্যারেটের ৫১৩ টাকা। সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম বেড়েছিল ৪২০ টাকা বেড়েছে।

আগের দিন ২০ এপ্রিল (শনিবার) সব ধরনের সোনার দাম খানিকটা কমানো হয়েছিল। সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের দাম কমানো হয়েছিল ভরিতে ৮৪০ টাকা। অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছিল।

তার আগে ১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সোনার দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। এমনিতেই বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেশ চড়া ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ডামাডোলে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ৪০০ ডলারে উঠেছিল।

তবে গত দুই-তিন দিনে বেশ খানিকটা কমেছে। বুধবার বিকাল ৫টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩১৬ ডলার ৩৬ সেন্ট। এক দিনের ব্যবধানে কমেছে ৭ ডলার ৩৫ সেন্ট বা দশমিক ৩২ শতাংশ।

বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।

কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে, বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়তে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতায় মূল্যবান এই ধাতুর দাম পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।

রোজার ঈদের আগে দেশের বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হেয়ছিল।

গত ৬ এপ্রিল বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। দুদিন বাদে ৮ এপ্রিলও বাড়ানো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

ঈদের পর গত ১৮ এপ্রিল আবার বাড়ানো হয়েছিল দাম। সেই দফায় বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা। তাতে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড দর।

সব মিলিয়ে ১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে সাড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি বাড়িয়েছিল বাজুস। সেখানে শনিবার কমানো হয় ৮৪০ টাকা।

সোনার দাম এত কম সময়ে বাড়ছে-কমছে কেন- প্রশ্নের উত্তরে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, সোনার দাম নির্ধারণের পদ্ধতি তারা বদলেছেন, এখন তারা বিশ্ব স্বীকৃত ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি’ অনুসরণ করেন।

সেই পদ্ধতির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত, তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত, তখন বাড়াতাম।

“এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, দিনে দুই বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।”

কেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন- জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, সোনা আমদানি না হওয়ার কারণেই দেশের বাজারকে মানদণ্ড ধরছেন তারা।

“আমরা এখন বৈধভাবে কোনও গোল্ড আমদানি করি না। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু প্রতিষ্ঠান আমদানি করলেও এখন কেউ করছে না। কেননা, ডিউটি (শুল্ক) অনেক বেশি। আমদানি করলে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”

সেই কারণে বাজুস সভাপতি, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশনায় ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পলিসি’ অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে গোল্ড রিফাইনারি শুরু হলে এবং শুল্ক কমালে বৈধভাবে আমদানি হলে, তখন আমরা আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করব।”

সোনার দাম আরও কমল, ভরি ১১৩৫৬১ টাকা পূর্ববর্তী

সোনার দাম আরও কমল, ভরি ১১৩৫৬১ টাকা

সোনার দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৬ টাকা পরবর্তী

সোনার দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৬ টাকা

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর