সোনার দাম কমছেই
এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ৩১৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৩০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ২৫৭ টাকা। সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম কমেছে ভরিতে ২১০ টাকা।
সোনার দাম আরও কমেছে। প্রায় প্রতিদিনই অল্প অল্প করে কমছে; শুক্রবার ছাড়া গত ছয় দিনের পাঁচ দিনই কমেছে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
এক দিনের ব্যবধানে রবিবার দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ৩১৫ টাকা কমিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছে।
দেশে এখন এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ৯ হাজার ৬৫৫ টাকা লাগছে; অর্থাৎ এক ভরি সোনার দাম পড়ছে ১ লাখ ১২ হাজার ৬১৬ টাকা (১ ভরিতে ১১.৬৬৪ গ্রাম)।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগছে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৯৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগছে ৯২ হাজার ১৪৬ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৭৬ হাজার ৬৩২ টাকা ভরিতে।
আগের দিন শনিবার ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানো হয়েছিল। তার আগে টানা তিন দিনে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ৮৬৮ টাকা কমানো হয়েছিল।
এ নিয়ে গত ছয় দিনে পাঁচ দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৬ হাজার ৮১৩ টাকা কমেছে।
রবিবার দুপুরে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিকেল ৪টা থেকে নতুন কার্যকর হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
রবিবার দাম কমানোর আগে হলমার্ক করা প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩১ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ৯২ হাজার ৪০২ টাকায় বিক্রি হয়।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম ছিল ৭৬ হাজার ৮৪২ টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ৩১৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৩০৩ টাকা। ১৮ ক্যারেটের কমেছে ২৫৭ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম কমেছে২১০ টাকা।
এর আগে ২১ এপ্রিল দেশের বাজারে সোনার দর বাড়িয়েছিল বাজুস। ওইদিন প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬৩০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছিল ৬০৬ টাকা; ১৮ ক্যারেটের ৫১৩ টাকা। সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম বেড়েছিল ৪২০ টাকা।
তার আগের দিন ২০ এপ্রিল সব ধরনের সোনার দাম খানিকটা কমানো হয়েছিল। সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের দাম কমানো হয়েছিল ভরিতে ৮৪০ টাকা। অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছিল।
তার আগে ১২ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় সোনার দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস।
এমনিতেই বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেশ চড়া ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ডামাডোলে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ৪০০ ডলারে উঠেছিল।
তবে গত কয়েক দিনে বেশ খানিকটা কমেছে। রবিবার সোনার আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ ছিল। তার আগে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৩৩৭ ডলার ৯৩ সেন্ট।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে, বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পরও বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়তে থাকে।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতায় মূল্যবান এই ধাতুর দাম পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে।
রোজার ঈদের আগে দেশের বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হেয়ছিল।
গত ৬ এপ্রিল বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। দুদিন বাদে ৮ এপ্রিলও বাড়ানো হয় ১ হাজার ৭৫০ টাকা।
ঈদের পর গত ১৮ এপ্রিল আবার বাড়ানো হয়েছিল দাম। সেই দফায় বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা। তাতে ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড দর।
সোনার দাম এত কম সময়ে বাড়ছে-কমছে কেন- প্রশ্নের উত্তরে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, সোনার দাম নির্ধারণের পদ্ধতি তারা বদলেছেন, এখন তারা বিশ্ব স্বীকৃত ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি’ অনুসরণ করেন।
সেই পদ্ধতির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত, তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত, তখন বাড়াতাম।
“এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, দিনে দুই বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।”
কেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন- জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, সোনা আমদানি না হওয়ার কারণেই দেশের বাজারকে মানদণ্ড ধরছেন তারা।
“আমরা এখন বৈধভাবে কোনও গোল্ড আমদানি করি না। বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। প্রথম দিকে কিছু প্রতিষ্ঠান আমদানি করলেও এখন কেউ করছে না। কেননা, ডিউটি (শুল্ক) অনেক বেশি। আমদানি করলে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”
সেই কারণে বাজুস সভাপতি, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশনায় ‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পলিসি’ অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে গোল্ড রিফাইনারি শুরু হলে এবং শুল্ক কমালে বৈধভাবে আমদানি হলে, তখন আমরা আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করব।”
কমেন্ট