দুই সপ্তাহে সোনার দাম বাড়ল ১০,৩৮২ টাকা
সোমবার থেকে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ২৪৯ টাকা লাগবে; অর্থাৎ এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৪ টাকা। ফাইল ছবি
দেশের বাজারে সোনার দাম চড়ছেই। একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ানো হয়েছে মূল্যবান এই ধাতুর দাম।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম আরও ১ হাজার ৮৫ টাকা বেড়েছে।
এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে ছয় দফায় বাড়ানো হয়েছে সোনার দাম। এই সময়ের মধ্যে ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে বেড়েছে ১০ হাজার ৩৮২ টাকা।
অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ২৪৯ টাকা লাগবে; অর্থাৎ এক ভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৪ টাকা (১ ভরিতে ১১.৬৬৪ গ্রাম)।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ১৪ হাজার ১০৯ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ৯৭ হাজার ৮০৩ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৮০ হাজার ৮৬৬ টাকায়।
রবিবার পর্যন্ত হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ১৫৬ টাকা লেগেছে। এক ভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ৯৬ হাজার ৯১৬ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার ১৩২ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৮৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের বেড়েছে ১ হাজার ২৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ৮৮৬ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ৭৩৫ টাকা।
রবিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার থেকে এই দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
টানা আট দফায় ভরিতে ১০ হাজার ২৬৬ টাকা কমানোর পর গত ৪ মে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। পরের দিন ৫ মে বাড়ানো হয় ৭৩৫ টাকা। ৭ মে এক লাফে বাড়ানো হয় ভরিতে ৪ হাজার ৫০২ টাকা।
১২ মে বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৮৩২ টাকা। ১৯ মে শনিবার বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ১৭৮ টাকা। রবিবার থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
এ নিয়ে ছয় দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৩৮২ টাকা বাড়ানো হলো।
টানা বাড়তে বাড়তে গত ১৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল।
এর পর নিম্মমূখী হয় সোনার দর। গত ৪ মে থেকে ফের বাড়ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে; প্রতি আউন্সের দাম (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) ২ হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে সোনার আন্তর্জাতিক বন্ধ ছিল।
তার আগের দিন শনিবার বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৫ ডলার ৬৯ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৪১৩ ডলার ৯৩ সেন্টে উঠেছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক আউন্স স্বর্ণের দাম এত উচ্চতায় উঠেছে।
জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ৩৫০ ডলারের বেশি বেড়েছে।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতায় মূল্যবান এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।
সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই।
তবে সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেন্ট