সোনার দামে রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা

সোনার দামে রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা

মাস তিনেক আগে ১৮ এপ্রিল টানা বাড়তে বাড়তে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল। যা ছিল এতদিন দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দর।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে সোনার দাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠল। সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকায় বিক্রি হবে। এর আগে কখনই দেশে এই মানের সোনা এত বেশি দামে বিক্রি হয়নি।

মাস তিনেক আগে ১৮ এপ্রিল টানা বাড়তে বাড়তে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল। যা ছিল এতদিন দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দর।

রবিবার রাতে সোনার দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী, ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৯০ টাকা বেড়েছে।

অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।

দুই দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৪৭৩ টাকা বাড়ানোর পর গত ৩০ জুন দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ওদিন এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১ জুলাই থেকে ওই দর কার্যকর হয়।

সপ্তাহ না যেতেই ৭ জুলাই এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৬১০ টাকা বাড়ানো হয়। ৮ জুলাই থেকে যা কার্যকর হয়।

এর আগে ১২ জুন ভরিতে এক হাজার ৭৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার আগে টানা তিন দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৬৬৩ টাকা কমানো হয়েছিল।

এর আগে ছয় দফায় এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৩৮২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ২৯৫ টাকা লাগবে। ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২২ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ৯৮ হাজার ২৪৬ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৮১ হাজার ২২৮ টাকায়।

রবিবার পর্যন্ত হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ১৯৩ টাকা লেগেছে; এক ভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ৯৭ হাজার ২৭৮ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার ৪২৩ টাকায়।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৯০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৩১ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ৯৬৮ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ৮০৫ টাকা।

রবিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার থেকে এই দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এবং বাজুস নির্ধারিত গহনার নূন্যতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে দেশের সব ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে।

টানা আট দফায় ভরিতে ১০ হাজার ২৬৬ টাকা কমানোর পর গত ৪ মে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। পরের দিন ৫ মে বাড়ানো হয় ৭৩৫ টাকা। ৭ মে এক লাফে বাড়ানো হয় ভরিতে ৪ হাজার ৫০২ টাকা।

১২ মে বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৮৩২ টাকা। ১৯ মে বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ১৭৮ টাকা।

সব মিলিয়ে ছয় দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৩৮২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

টানা বাড়তে বাড়তে গত ২১ এপ্রিল ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল। যা ছিল এতদিন দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দর।

বিশ্বাজারেও চড়া

এদিকে গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। রবিবার বিশ্ববাজার বন্ধ ছিল। তার আগে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৪১১ ডলার ৬৭ সেন্ট।

গত ৭ জুলাই রাতে বাজুস যখন সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৩৬০ ডলার।

লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গত ১৮ মে প্রতি আউন্সের দাম (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) ২ হাজার ৪২৩ ডলারে উঠেছিল। যা ছিল বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দর। এর পর থেকে নিম্মমূখী হয় মূল্যবান এই ধাতুর দর।

বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।

কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতায় মূল্যবান এই ধাতুর দাম ঊর্ধ্বমূখী হয়েছিল।

দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।

সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই।

তবে সোনার দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।

২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোনার দাম বাড়ল ভরিতে ১ হাজার ৬১০ টাকা পরবর্তী

সোনার দাম বাড়ল ভরিতে ১ হাজার ৬১০ টাকা

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর