সোনার ভরি ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বাজারে এই প্রথম সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সোনার দাম আরও বেড়েছে। সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮৫ টাকায় বিক্রি হবে। এর আগে কখনই সোনার দর এত উচ্চতায় ওঠেনি। এক মাসের ব্যবধানে এই মানের সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৯০৪ টাকা বেড়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বাজারে এই প্রথম সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
সবশেষ ১৫ জুলাই ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৯০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। তখন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সোনার দাম ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকায় উঠেছিল। তা থেকে আরও ২ হাজার ৯০৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ৫৪৪ টাকা লাগবে। ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮৫ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ৬২৫ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৮৩ হাজার ১৯৯ টাকায়।
রবিবার পর্যন্ত হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১০ হাজার ২৯৫ টাকা লেগেছে। ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি সোনা কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২২ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ৯৮ হাজার ২৪৬ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৮১ হাজার ২২৮ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ৯০৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ২ হাজার ৭৭৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ২ হাজার ৩৭৯ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৯৭১ টাকা।
রবিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) এবং বাজুস নির্ধারিত গহনার নূন্যতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে দেশের সব ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়েছে।
টানা আট দফায় ভরিতে ১০ হাজার ২৬৬ টাকা কমানোর পর গত ৪ মে সবচেয়ে ভালো মানের সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। পরের দিন ৫ মে বাড়ানো হয় ৭৩৫ টাকা। ৭ মে এক লাফে বাড়ানো হয় ভরিতে ৪ হাজার ৫০২ টাকা।
১২ মে বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৮৩২ টাকা। ১৯ মে বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ১৭৮ টাকা।
সব মিলিয়ে ছয় দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৩৮২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
টানা বাড়তে বাড়তে গত ২১ এপ্রিল ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকায় উঠেছিল। ১৫ জুলাই ভরিতে আরও ১ হাজার ১৯০ টাকা বাড়নো হয়; দাম ওঠে ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকায়।
যা ছিল এতদিন দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দর।
বিশ্বাজারেও রেকর্ড
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ ছিল। তার আগের দিন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৫০৮ ডলার ১৮ সেন্ট।
এর আগে কখনই বিশ্ববাজারে সোনার দাম এত উচ্চতায় ওঠেনি।
গত ১৫ জুলাই যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৪১১ ডলার ৬৭ সেন্ট।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
মধ্যপাচ্যের চলমান অস্থিরতার কারণে এখন সোনার দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কোভিড মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।
দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ, ২১ ক্যারেটে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৮ ক্যারেটে ৭৫ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা থাকে।
সনাতন পদ্ধতির সোনা পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে কত শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা মিলবে, তার কোনো মানদণ্ড নেই।
তবে সোনার দাম বাড়লে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।
২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেন্ট