বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন, ৯ মাসে সর্বনিম্ন
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৯৬ সেন্ট বা ৫ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৭৩ ডলার ৫৬ সেন্টে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৬২ সেন্ট কমে ৭০ ডলার ১৫ সেন্টে নেমে এসেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় দরপতন হয়েছে। অপরিশোধিত তেলের অন্যতম মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭৩ ডলারে নেমে এসেছে। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দর নেমেছে ৭০ ডলারে। এই দর নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ লিবিয়ার তেল উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে বিরোধের সমাধানে তেলের দামে এই ধস নেমেছে। এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক চীনে মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে চাহিদা কমে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় তেশের দাম কমছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৯৬ সেন্ট বা ৫ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৭৩ ডলার ৫৬ সেন্টে নেমে এসেছে। এই দাম গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে সবচেয়ে কম।
অন্যদিকে ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ৬২ সেন্ট কমে ৭০ ডলার ১৫ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই দাম গত জানুয়ারির চেয়ে সবচেয়ে কম।
লিবিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জ্বালানি রাজস্ব নিয়ে বিবাদে তেল উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ে। গত ২৯ আগস্ট প্রায় ৭ লাখ ব্যারেল তেল কম উত্তোলন হয়। দেশটির জ্বালানি সম্পদ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অয়েল কর্প (এনওসি) জানিয়েছে, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত তেল উৎপাদনের দৈনিক গড় ছিল ৫ লাখ ৯১ হাজার ২৪ ব্যারেল। অথচ জুলাই মাসে এই পরিমাণ ছিল দৈনিক প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল।
লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে সাদিক আল কবিরকে অপসারণ করেছে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রশাসন। এর বিরোধিতা করে পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের দাবি করে, কবিরকে আগের পদে বহাল করতে হবে। এই বিবাদকে কেন্দ্র করে তেল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এনওসির অধীন ওয়াহা তেল কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের দৈনিক গড় উৎপাদন ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলে নেমে এসেছে। স্থবিরতা না কাটলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান রাপিদান এনার্জি গ্রুপ অনুমান করেছে, জাতীয় পর্যায়ে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ৯ থেকে ১০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সুসংবাদ এসেছে। লিবিয়ায় রাজনৈতিক বিরোধের সমাধানের খবরে দেশটি আগের মতোই তেল উৎপাদন ও রপ্তানি করবে, তাতে সরবরাহ বাড়বে—এ আশায় বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় পতন হয়েছে বলে জানিয়ে রয়টার্স।
লিবিয়ায় জাতিসংঘের সহায়তা মিশন ইউএনএসএমআইএল সোমবার বলেছে যে, সংকট সমাধানে সাহায্য করার জন্য ত্রিপোলিতে আলোচনার পর প্রতিদ্বন্দ্বী লিবিয়ার দলগুলোর মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য’ বোঝাপড়া হয়েছে।
ইউএনএসএমআইএল জানিয়েছে, মঙ্গলবার চুক্তিটি চূড়ান্ত ও স্বাক্ষরের লক্ষ্য নিয়ে একটি খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
লিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সাদিক আল-কবির বলেছেন, নতুন ট্যাব খুলেছেন একটি চুক্তি আসন্ন বিরোধের সমাধান করতে এবং তেল উৎপাদন পুনরুদ্ধারকে উত্সাহিত করতে, মঙ্গলবার ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে।
স্যাক্সো ব্যাংকের বিশ্লেষক ওলে হ্যানসেন বলেছেন, “এই চুক্তির খবরই জ্বালানি তেলে দরে পতন ঘটিয়েছে।”
ব্রোকারেজ এক্সএম-এর সিনিয়র ইনভেস্টমেন্ট বিশ্লেষক চারালামপোস পিসোরোস বলেছেন, “সপ্তাহান্তে বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত আমদানিকারক চীনে মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে চাহিদা কমবে বলে তেলের দাম কমে গেছে।”
২০১১ সালে মুয়াম্মর গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসন অবসান হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে স্থিতিশীলতা কার্যত নেই বললেই চলে। ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব-পশ্চিম বিবাদ বিদ্যমান।
গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তেল উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে প্রায় ৮ মাস তেল উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছিল।
কমেন্ট