দাম কমাতে আলু, পেঁয়াজ ও কীটনাশকে শুল্ক ছাড়
বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে শুল্ক কমানোর কথা জানানো হয়। যা বহাল থাকবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে আলু, পেঁয়াজ এবং কীটনাশক আমদানির শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে শুল্ক কমানোর কথা জানানো হয়। যা বহাল থাকবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
এনবিআরের ঘোষণা অনুযায়ী, আলুতে ১৩ শতাংশ, কীটনাশকে ২০ শতাংশ এবং পেঁয়াজে ৫ শতাংশ আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আলু আমদানিতে বর্তমানে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয়। যা ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে সব মিলিয়ে আলুতে কমেছে ১৩ শতাংশ শুল্ক।
পেঁয়াজের উপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
আগের মাস জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
জুলাই মাসে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের জুলাই মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের জুলাইয়ে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১১১ টাকা ৬৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি (১২ মাসের গড় হিসাব) নিয়ে শেষ হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছর। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে এ দুটি নিত্যপণ্যের দাম।
একই সঙ্গে ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত জরুরি কীটনাশকের উপর প্রযোজ্য ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে কেবল ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে এর উপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুল্ক কমানোর কারণ হিসেবে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানিয়েছে, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি।
তাছাড়া দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে এই তিন নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এই শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে এনবিআর।
এছাড়াও দেশিয় উৎপাদন বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদে কৃষকের আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কমেন্ট