বেঁধে দেওয়ার পর ডিম-মুরগির দাম আরও বেড়েছে
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে ডিম-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হতো; কিন্তু কখনই বেঁধে দেওয়া দরে বাজারে পণ্য পাওয়া যেত না। অন্তবর্তী সরকারের সময়েও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
সরকারিভাবে ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি; উল্টো আগের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া ওই দামে ডিম-মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে ডিম-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হতো; কিন্তু কখনই বেঁধে দেওয়া দরে বাজারে পণ্য পাওয়া যেত না। অন্তবর্তী সরকারের সময়েও সেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা ঠিক করা হয়। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
রোববার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগির এই ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারে সোমবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং ডিম আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে হাইব্রিড ধরনের সোনালি মুরগির কেজি ২৪০ টাকা।
অন্যদিকে, ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে। তাতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। ফার্মের মুরগির সাদা ডিমও বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর প্রকাশ করে। ঈদে মিলাদুন্নবীর কারণে সরকারি ছুটি থাকায় সোমবার বাজার দরের তথ্য প্রকাশ করেনি টিসিবি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, আগের দিন রোববার ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬২ টাকা দরে। তাতে প্রতিটি ডিমের দাম ছিল ১৩ টাকা ৫০ পয়সা।
গত শুক্রবার এআরএইচ ডট নিউজ—এর প্রতিবেদক ঢাকার কয়েকটি বাজারে মুরগি ও ডিমের দামের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিলেন। তখন কোনো বাজারেই ১৮০ টাকার নিচে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। অথচ রোববার সরকারিভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ টাকার নিচে নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে বাজারে আগের চেয়ে বেশি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গত শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৫০-২৭০ টাকায় এবং ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ টাকা ও সাদা ডিম ১৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার বাজারে এসব পণ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির ডিম অনুমতি দেওয়ার পর গত সপ্তাহে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি ডিম দেশে আসে। ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
এর আগেও দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আলু, ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল বিদায়ী সরকার। কিন্তু ওই দাম বাজারে কার্যকর হয়নি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, তারা পাইকারিতেই প্রতি ১০০টি ডিম বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২৬০ টাকায়, অর্থাৎ হালিতে ৫০ টাকা ৪০ পয়সা।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, খুচরাতেই প্রতি হালির দাম থাকার কথা সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা।
সোমবার শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারে ৫৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া মহল্লায় ডিমের ডজন আগের দিনের মতই ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, তবে এর ‘ন্যায্য মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে ডজনপ্রতি ১৪৩ টাকা।
শেওড়াপাড়া বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা এমদাদ আলী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আজ (সোমবার) আমরা ১৬৫ টাকা ডজন দরে বাদামি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি করেছি। হালি বিক্রি করেছি ৫৮ টাকা। গতকাল (রোববার) হালি বিক্রি করেছিলাম ১৬০ টাকা। ডজন নিয়েছিলাম ৫৫ টাকা।”
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “শুধু দাম নির্ধারণ করলেই তো হবে না। দেশে ফিডের (মুরগির খাবার) আর বাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি। এই উৎপাদন খরচ না কমালে কোনোভাবেই ডিমের দাম কমানো সম্ভব না। আর মুরগিতে প্রত্যেক খামারি এখন লস দিয়ে বিক্রি করছে।”
কমেন্ট