সোনার ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ছাড়াল
আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম রেকর্ড গড়েছে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স ২ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
রবিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকায় বিক্রি হবে। এর আগে কখনই দেশের বাজারে এত বেশি দামে সোনা বিক্রি হয়নি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা বাড়ছে। অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
টানা কয়েক দফা বাড়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ৬২১ টাকা কমিয়েছিল বাজুস। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
দুই সপ্তাহ পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫৮১ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজস। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়। শনিবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকায় টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, রবিবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১১ হাজার ৪০৭ টাকা লাগবে। ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬০ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৮৯ হাজার ২১৮ টাকায়।
রবিবার পর্যন্ত দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে লেগেছে ১১ হাজার ১৩৭ টাকা। ১১.৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ৬ হাজার ২৮২ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ৮৭ হাজার ১৩ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ২ হাজার ৯৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ২০৪ টাকা।
শনিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বরিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বিশ্ববাজারেও রেকর্ড
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম রেকর্ড গড়েছে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স ২ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার এই ধাতুর দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। এবার সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।
শনিবার রাত সোয়া ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৩৪ ডলার ৯৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬২২ ডলার ৩০ সেন্টে উঠেছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে যখন দেশের বাজারে সোনার বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৫৭৮ ডলার ২৪ সেন্ট।
বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বুধবার মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বড় ব্যবধানে কমানোর বিষয়টি। ওই দিন দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট সুদ কমানো হয়। ফলে সোনা কেনার দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক আরও বাড়ে।
বিশ্ববাজারে ২০২৪ সালে সোনার দাম এখন পর্যন্ত ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালের পর সোনার দাম কখনোই এতটা বাড়েনি। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলছে। সংঘাত চলছে বিশ্বের আরও অনেক দেশে। ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে অনেকেই সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার মূল্যবৃদ্ধিতে অবশ্য সাময়িক বিরতি আসতে পারে।
টি ডি সিকিউরিটিজের পণ্যবিষয়ক কৌশলবিদ ড্যানিয়েল ঘালি বলেন, ফেড বড় কাটছাঁটের মাধ্যমে সুদের হার কমানোর যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, পরিষ্কারভাবেই তার সঙ্গে সোনা কেনার সম্পর্ক আছে।
সোনার দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার কারণে অবশ্য চীন ও ভারতের খুচরা বাজারে বিক্রি কমে গেছে। কমার্জ ব্যাংকের এক নোটে বলা হয়েছে, এই দাম বাড়া আজীবন চলতে পারে না। এই প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস হলো, ফেডের আগামী দুই বৈঠকে সুদের হার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট করে কমানো হতে পারে।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সোনার দাম আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত
তবে সোনার দাম বাড়লে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।
২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেন্ট