এবার ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড়
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলছে, আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৩ দশমিক ৮০ টাকা কমবে; বাজারের ডিমের সরবরাহ বাড়বে।
ভোজ্যতেলের পর এবার ডিম আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। ডিম আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
চড়তে থাকা ডিমের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শুল্ক–সুবিধা থাকবে।
বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বলছে, আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৩ দশমিক ৮০ টাকা কমবে; বাজারের ডিমের সরবরাহ বাড়বে।
“ফলে ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম কমবে। এ ছাড়া কনফেকশনারি, বেকারিসহ ডিমনির্ভর খাদ্য উৎপাদন শিল্পের খরচও কমবে।”
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিহালি (৪টি) ফার্মের ডিম ৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে এক ডজনের (১২টি) দাম পড়ে ১৬২ টাকা।
তবে রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতিডজন ডিম ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ওই সময় প্রতি ডজন ডিম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৪২ টাকায় বিক্রি করার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম পড়বে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা এবং পাইকারিতে ১১ টাকা শূন্য ১ পয়সা দাম বেঁধে দেওয়া হয়।
কিন্তু ওই দামে ডিম পাওয়া যায়নি কোথাও। বরং তখন ডিমের ডজন ছিল ১৬৫ টাকা। এর পর তা বেড়ে ১৭০-১৮০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ডিম উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান নতুন মূল্য নির্ধারণের কথা জানান।
তিনি বলেন, উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা; পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে।
নতুন মূল্য কার্যকরের পর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
ভোক্তার ডিজি বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু দেশের কোথাও এই দরে ডিম বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
এ দিকে ভোক্তা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে আবারও কর ছাড় দিয়েছে সরকার। স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি—উভয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (ইআরডি) থেকে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই ছাড়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে চিনি আমদানিতেও শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার।
পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেলের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পরিশোধিত ও অপরিশোধিত পাম তেলের আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছাড় অব্যাহত থাকবে।
বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়, বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে আপাতত ভ্যাট দিতে হবে না এই শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের। বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ ভ্যাট দিলেই হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস ধরে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি এক চিঠিতে জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সমিতি মন্ত্রণালয়কে জানায়, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও পাম তেলের দাম ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে।
সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেল পরিশোধন শিল্পের সমিতি জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে দাম তারা বাড়াবে না, যদি সরকার আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারও চায় তারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই কর ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও দুই মাসের জন্য উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার হয়েছিল। আর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়েছিল।
সম্প্রতি দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার এসব পণ্য আমদানিতে কর ছাড় দেওয়া শুরু করেছে। এর আগে সরকার পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ৯ অক্টোবর এনবিআর অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে।
কমেন্ট