ডিমের বাজারে স্বস্তি, হালিতে কমেছে ১০ টাকা
ডিমের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধ করতে সরকার ডিম আমদানির অনুমোদন, শুল্কছাড় এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে।
ডিমের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। হালিতে কমেছে ১০ টাকা। ডজনে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি না হলেও কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিডজন ডিম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল; হালি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। শুক্রবার প্রতিডজন ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; হালি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতেও প্রতিহালি ফার্মের ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ডিমের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া, আমদানি শুল্ক কমানোসহ গত এক সপ্তাহে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেওড়াপাড়া বাজারে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অভিযান করতে দেখা যায়। এ সময় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়।
পরে অবশ্য ওই দোকানগুলোতে প্রতিডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়; কোনো কোনো দোকানে ১৪৫ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দুই দফায় ডিমের যৌক্তিক দাম বেঁধে দিয়েছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টির ফলে পোল্ট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের সরবরাহ কমে গেলে মাস খানেক আগে ডিমের দামে উল্লম্ফন দেখা দেয়। প্রতি ডজন ডিম ১৬৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
ডিমের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধ করতে সরকার ডিম আমদানির অনুমোদন, শুল্কছাড় এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের উদ্যোগে, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সলের (বিপিআইসিসি) সমন্বয়ে ডিম সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পাইকারি বাজার থেকে বেঁধে দেওয়া দামে ডিম সরবরাহ শুরু করেছে গত বৃহস্পতিবার। কাপ্তানবাজার থেকে পাইকারি দামে এই ডিম সরবরাহ করা হয়।
সর্বশেষ আজ তেজগাঁও ডিমের আড়ৎ থেকে ২০ লাখ পিস করে ডিম দেওয়া শুরু করা হয়েছে।
পাইকারি পর্যায়ে এই ডিমের দাম ১১ টাকা ১ পয়সা করে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। খুচরায় এই ডিমের দাম পড়ার কথা ডজনে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, বাজারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিয়মিত অভিযান চলছে। খামারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ডিম সরবরাহ বাড়িয়েছে। তাছাড়া শুল্কছাড়ের সঙ্গে সরকার নতুন করে সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এসব কারণে দাম কমে আসছে।
এছাড়া খোলা বাজারে (ওএমএস) সাশ্রয়ী মূল্য ডিম ও সবজি সরবরাহ করারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা গত সপ্তাহে চালু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় এক ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৩০ টাকা। এই উদ্যোগও দাম কমার পেছনে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঢাকার ডিমের দুই পাইকারি বাজার—কাপ্তানবাজার ও তেজগাঁওয়ের আড়তদারেরা অভিযোগ করেন, ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিম সরবরাহ করছে না। সরকার নির্ধারিত দরে উভয় বাজারে প্রতিদিন ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১১ লাখ ডিম সরবরাহ করা হয়েছে। এতে ডিমের দাম কমছে কিছুটা ধীরে। সরবরাহ বেশি থাকলে দ্রুতই দাম কমে আসত।
কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, তেজগাঁওয়ের আড়ত থেকে শুক্রবার সকালে ১১ টাকা ১০ পয়সা পাইকারি দরে একেকটি ডিম কিনেছেন তিনি; আর বিক্রি করছেন প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায়।
এই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী বারেক জানান, তেজগাঁও আড়ত থেকে তিনি প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ২০ পয়সা দরে কিনেছেন। আর প্রতি ডজন বিক্রি করছেন ১৪৫ টাকায়। তাতে ডজনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১২ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করেছেন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সম্প্রতি ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১২ টাকায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে মঙ্গলবার ডিমের দাম ও সরবরাহ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবেন।
তারপর পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন ঢাকার দুই পাইকারি বাজার তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারের আড়তে সরাসরি ১০ লাখ করে ২০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।
গত বুধবার রাত থেকে কাপ্তানবাজারে উৎপাদক কোম্পানিগুলো সরাসরি ডিম সরবরাহ শুরু করে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তেজগাঁওয়ে সরাসরি ডিম সরবরাহ শুরু করে উৎপাদক কোম্পানিগুলো।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ডায়মন্ড, কাজী, পিপলস ও প্যারাগন গ্রুপ বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে চার লাখ ডিম সরবরাহ করেছে। পরিবহন খরচসহ প্রতিটি ডিমের দাম পড়েছে ১০ টাকা ৯১ পয়সা। আমরা পাইকারিতে ১১ টাকায় বিক্রি করেছি। বড় কোম্পানিগুলো প্রতিদিন ১০ লাখ করে ডিম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ডিম না পেলে তো হবে না। কারণ, প্রতি রাতে ১৫ লাখ ডিম বিক্রি হয় তেজগাঁওয়ে।”
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কাপ্তানবাজারে সাত লাখ ডিম সরবরাহ করে বড় বড় উৎপাদক কোম্পানি। সেখানেও প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সায় সরবরাহ করা হয়। সেই ডিম ১১ টাকা ১০ পয়সায় পাইকারি দরে বিক্রি করেন আড়তদারেরা।
কাপ্তানবাজারের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বলেন, বড় উৎপাদক কোম্পানিগুলোর খামারে দিনে ১ কোটি ২০ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়। তারা সরকার নির্ধারিত দরে সরাসরি আড়তে দিচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। সেটিকে বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ করতে হবে। বাকি ডিমও সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রির জন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
কমেন্ট