রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে সোনার দর, ভরি দেড় লাখ ছাড়াল
মঙ্গলবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকায় বিক্রি হবে। এ দফায় ভরিতে বেড়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা।
সোনার দাম বাড়ছেই। বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে; রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে।
মঙ্গলবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকায় বিক্রি হবে। এ দফায় ভরিতে বেড়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনই সোনার দাম এত উচ্চতায় উঠেনি।
এ নিয়ে টানা সাত দফায় প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা।
এক সপ্তাহ আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ২ হাজার টাকা বাড়ানোয় ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকায়। যা ছিল এত দিন সর্বোচ্চ।
তার চার দিন আগে ৬ ফেব্রুয়ারি এই মানের সোনার দাম ২ হাজার ৯২৮ টাকা বাড়ানোয় ভরি হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ টাকায়।
সোমবার আরও ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। মঙ্গলবার থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকা খরচ করতে হবে।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর এই মানের সোনার দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪২৪ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা নিম্মমূখী হয়; ১ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা মধ্যে ওঠানামা করে।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১২ হাজার ৯৭০ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৬৭ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ১ হাজার ৯৩২ টাকায়।
সোমবার পর্যন্ত এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১২ হাজার ৮৪৪ টাকা লেগেছে। প্রতিভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৭ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৯১৬ টাকায়।
হিসাব বলছে, সপ্তাহের দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ১ হাজার ১৯০ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরির দাম বেড়েছে ১ হাজার ১৫ টাকা।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর কমানো হয় ১ হাজার ২৪৮ টাকা।
১৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ৮৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ১৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১২ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ৮৭৮ টাকা।
এভাবে উঠানামার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছিল ২০২৪ সাল। গত বছরে মূল্যবান এই ধাতুর দর ৩৫ বার বেড়েছিল; কমেছিল ২৭ বার।
তবে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে টানা বেড়েছে। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতেও সেই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ২২ ক্যারেটের এক ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা। মঙ্গলবার থেকে এই সোনা ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকায় বিক্রি হবে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৪০ হাজার ৫৯১ টাকা বেড়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৩৬ দমিক ৬৭ শতাংশ।
বিশ্ববাজারেও বাড়ছে
এদিকে বিশ্ববাজারেও সোনার দাম রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের এক আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৮০০ ডলার স্পর্শ করে। গত ১০ ফেব্রুয়ারিতে তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
মাঝে দু-তিন দিন ২ হাজার ৯০০ ডলারের সামান্য কিছু কম থাকলেও সোমবার রাতে ফের ২ হাজার ৯০০ ডলার ছুঁয়েছে।
গত কয়েক দিনে তা বেড়ে সোমবার ফের ২ হাজার ৯০০ ডলার অতিক্রম করেছে।
চড়তে চড়তে গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে প্রতিআউন্স সোনার দাম প্রায় ২ হাজার ৮০০ ডলারে উঠে গিয়েছিল। সেই দর কমতে কমতে ১৫ নভেম্বর ২ হাজার ৫৫০ ডলারে নেমে এসেছিল।
মাঝে কিছু দিন টানা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে সেই সোনার দর ফের নিম্নমূখী হয়। মাস খানেক ধরে আবার ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে।
সোমবার রাত ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ১৫ ডলার ৯৫ সেন্ট বেড়ে ২ হাজার ৯০০ ডলার ৩ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, তখন অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম এর চেয়ে বেশি ছিল, ২ হাজার ৯০৯ ডলার ১৬ সেন্ট।
গোল্ড পাইসের তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দর ১৭৫ ডলার ৩৯ সেন্ট বেড়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৮০ ডলার ৪৪ সেন্ট বা ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ।
আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৬৭ ডলার ৫৬ সেন্ট। শতাংশ হিসাবে যা ৪৩ শতাংশ।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম কমতে কমতে ২ হাজার ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে এখন সোনার দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের পর বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতার কারণে সোনার দাম বাড়ছে।
ক্ষমতায় বসার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা কৌশলে পাল্টা জবাবের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিংও। পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ আরও জোরদার হয়েছে।
পাল্টা জবাবের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেবে তারা।
এর আগে চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে তা কার্যকর হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতির কারণে সোনার দাম বাড়ছে। নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোনার চাহিদা বেড়ে গেছে। সে কারণেই দাম বাড়ছে।
কমেন্ট