শুক্রবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় বিক্রি হবে। এ দফায় ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ২৪৩ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনই সোনার দাম এত উচ্চতায় উঠেনি। ফাইল ছবি

সোনার দাম বাড়ছেই। বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে; রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে।

শুক্রবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় বিক্রি হবে। এ দফায় ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ২৪৩ টাকা। দেশের বাজারে এর আগে কখনই সোনার দাম এত উচ্চতায় উঠেনি।

এ নিয়ে টানা আট দফায় প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ হাজার ৮২ টাকা।

দুই দিন আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানোয় দেশে প্রথমবারের মতো মূল্যবান এই ধাতুর ভরি দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকায় ওঠে।

তার এক সপ্তাহ আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ২ হাজার টাকা বাড়ানোয় ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকায়।

৬ ফেব্রুয়ারি এই মানের সোনার দাম ২ হাজার ৯২৮ টাকা বাড়ানোয় ভরি ওঠে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ টাকায়।

সোমবার আরও ৩ হাজার ২৪৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। শুক্রবার থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা খরচ করতে হবে।

বাজুসের সোনার দর বৃদ্ধি-হ্রাস সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর এই মানের সোনার দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪২৪ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা নিম্মমূখী হয়; ১ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা মধ্যে ওঠানামা করে।

বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ২৪৮ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৩ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪২৬ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৪ হাজার ২০৬ টাকায়।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১২ হাজার ৯৭০ টাকা লেগেছে। প্রতিভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫১হাজার ২৮২ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৬৭ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৩২ টাকায়।

হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ৩ হাজার ২৪৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ৩ হাজার ১০৩ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ২ হাজার ৬৫৯ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরির দাম বেড়েছে ২ হাজার ২৭৪ টাকা।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর কমানো হয় ১ হাজার ২৪৮ টাকা।

১৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ৮৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ১৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১২ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ৮৭৮ টাকা।

এভাবে উঠানামার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছিল ২০২৪ সাল। গত বছরে মূল্যবান এই ধাতুর দর ৩৫ বার বেড়েছিল; কমেছিল ২৭ বার।

তবে নতুন বছরে সোনার দাম টানা বাড়ছে। প্রথম বাড়ে ১৫ জানুয়ারি, এরপর আট বার বাড়ল। এরমধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেড়েছে তিন বার। আর চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত বেড়েছে পাঁচ বার।

৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানোর পর ভরি ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৪ টাকা। এর পর ১৫ জানুয়ারি এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকায়।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে দেড় মাসে আট দফায় প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা। আর ১৫ জানুয়ারি থেকে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ হাজার ৮২ টাকা।

বৃহস্পতিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ২২ ক্যারেটের এক ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা। এর পর ৬ মার্চ এই মানের সোনার দাম ২ হাজার ১১৬ টাকা; ভরি ওঠে ১ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকায়। শুক্রবার এই সোনা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় বিক্রি হবে।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৪১ হাজার ৬১৭ টাকা বেড়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ।

বিশ্ববাজারেও রেকর্ড

এদিকে বিশ্ববাজারেও সোনার দাম রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের এক আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৮০০ ডলার স্পর্শ করে। গত ১০ ফেব্রুয়ারিতে তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

মাঝে দু-তিন দিন ২ হাজার ৯০০ ডলারের সামান্য কিছু কম থাকলেও ফের তা ২ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ১৫ ডলার ৯২ সেন্ট বেড়ে ২ হাজার ৯৩৫ ডলার ৬৪ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে দশমিক ৫৫ শতাংশ।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৯০০ ডলার ৩ সেন্ট।

গোল্ড পাইসের তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দর ১৬১ ডলার ৭ সেন্ট বেড়েছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৪০৬ ডলার ৮৪ সেন্ট বা ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৯৩ ডলার ৯০ সেন্ট। শতাংশ হিসাবে যা ৪৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম কমতে কমতে ২ হাজার ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববাজারে এখন সোনার দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের পর বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতার কারণে সোনার দাম বাড়ছে।

ক্ষমতায় বসার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা কৌশলে পাল্টা জবাবের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিংও। পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ আরও জোরদার হয়েছে।

পাল্টা জবাবের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেবে তারা।

এর আগে চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে তা কার্যকর হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতির কারণে সোনার দাম বাড়ছে। নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোনার চাহিদা বেড়ে গেছে। সে কারণেই দাম বাড়ছে।

এই ধাক্কায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে রয়টার্স।