সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা খরচ করতে হবে।

সোনার দাম খানিকটা কমেছে। আট দফায় ভরিতে ১৬ হাজার টাকার বেশি বাড়ানোর পর রবিবার ১ হাজার ১৫৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা খরচ করতে হবে। রবিবার পর্যন্ত এই মানের সোনা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে। টানা আট দফায় প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছিল সোনার দাম ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছিল ১৫ হাজার ৮২ টাকা।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ২৪৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। শুক্রবার থেকে ওই দর কার্যকর হয়।

তার দুই দিন আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানোয় দেশে প্রথমবারের মতো মূল্যবান এই ধাতুর ভরি দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৮২ টাকায় ওঠে।

তার এক সপ্তাহ আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ২ হাজার টাকা বাড়ানোয় ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১২ টাকায়। ৬ ফেব্রুয়ারি এই মানের সোনার দাম ২ হাজার ৯২৮ টাকা বাড়ানোয় ভরি ওঠে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ টাকায়।

রবিবার ১ হাজার ১৫৫ টাকা কমানোয় ভরি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকায় নেমে এসেছে।

বাজুসের সোনার দর বৃদ্ধি-হ্রাস সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪২৪ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা নিম্মমূখী হয়; ১ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা মধ্যে ওঠানামা করে।

বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ১৪৯ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৮১ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৩ হাজার ৪০১ টাকায়।

রবিবার পর্যন্ত এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ২৪৮ টাকা লেগেছে। প্রতিভরি কিনতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৩ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪২৬ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ২০৬ টাকায়।

হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ১ হাজার ১৫৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ১ হাজার ১০৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের কমেছে ৯৪৫ টাকা।

সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরির দাম কমেছে ৮০৫ টাকা।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর কমানো হয় ১ হাজার ২৪৮ টাকা।

১৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ৮৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ১৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১২ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ৮৭৮ টাকা।

এভাবে উঠানামার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছিল ২০২৪ সাল। গত বছরে মূল্যবান এই ধাতুর দর ৩৫ বার বেড়েছিল; কমেছিল ২৭ বার।

তবে নতুন বছরে সোনার দাম টানা বাড়ছিল। প্রথম বাড়ে ১৫ জানুয়ারি, এরপর টানা আট বার বাড়ে। এরমধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেড়েছিল তিন বার। আর চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ে পাঁচ বার।

৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানোর পর ভরি ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৪ টাকা। এর পর ১৫ জানুয়ারি এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকায়।

এ হিসাবে দেখা যায়, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি—দেড় মাসে আট দফায় প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা বেড়েছে। আর ১৫ জানুয়ারি থেকে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছিল ১৫ হাজার ৮২ টাকা।

রবিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

বিশ্ববাজারেও কিছুটা কমেছে

এদিকে বিশ্ববাজারেও সোনার দাম কিছুটা কমেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়ায়। ১০ ফেব্রুয়ারি তা আরও বেড়ে ২ হাজার ৯০০ ডলার আতিক্রম করে।

২১ ফেব্রুয়ারি প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৯৪০ ডলারে ওঠে। যা ছিল রেকর্ড।

রবিবার রাত সোয়া ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৯৩৫ ডলার ৯৯ সেন্ট। কমেছে ৪ ডলার ৪৩ সেন্ট বা দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ছিল প্রায় একই, ২ হাজার ৯৩৫ ডলার ৬৪ সেন্ট।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিআউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৯০০ ডলার ৩ সেন্ট।