সোনার ভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ছাড়াল
ঈদের আগে কয়েক দফা বাড়ায় এই মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ। ঈদের পরে অবশ্য সেই দর কিছুটা কমে আসে। বৃহস্পতিবার বাড়ানোর পর তা ফের রেকর্ড গড়েছে।
দেশের বাজারে সোনার দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে; সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি উঠেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকায়।
ঈদের আগে কয়েক দফা বাড়ায় এই মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ। ঈদের পরে অবশ্য সেই দর কিছুটা কমে আসে। বৃহস্পতিবার বাড়ানোর পর তা ফের রেকর্ড গড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় বিশ্ব বাজারে সোনার দরপতন হয়। তার সঙ্গে সমন্বয় করে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দেশের বাজারেও সব মানের সোনার দাম কমানো হয়।
ওই দিন ২২ ক্যারেট সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরি নামে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকায়। বুধবার থেকে কার্যকর হয় ওই দর।
একদিন না যেতেই বৃহস্পতিবার সোনার দর ফের বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। এবার বাড়ানো হয়েছে ভরিতে ২ হাজার ৪০৩ টাকা। ভরি উঠেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকায়। শুক্রবার থেকে এই দরে বিক্রি হবে সোনা।
অন্যান্য মানের সোনার দরও একই হারে বাড়ানো হয়েছে।
ঈদের দুই দিন আগে ২৯ মার্চ ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৭৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার তিন দিন আগে ২৬ মার্চ বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা।
চড়তে চড়তে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় উঠেছিল। পরে অবশ্য কয়েক দফায় কমে ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
গত ১৬ মার্চ ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ভরি ওঠেছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকায়। ১৭ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছিল ওই দর।
তার আগে তিন দফায় ৬ হাজার ১৮২ টাকা কমানোর পর গত ৪ মার্চ এক দিনেই ২২ ক্যারেট মানের সোনার দর ভরিতে ৩ হাজার ৫৫৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাজুস। ৫ মার্চ থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
তিন দিনের ব্যবধানে ৮ মার্চ প্রতিভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমানো হয়। ৯ মার্চ থেকে ওই দর কার্যকর হয়। ভরি নেমেছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬২ টাকায়। ১ মার্চ ২ হাজার ৬২৪ টাকা কমানোয় ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৩ টাকায় নেমেছিল।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই সময় দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছিল। টানা আট দফায় প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছিল ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা।
এর পর ছয় দিনের ব্যবধানে তিন দফায় ৬ হাজার ১৮২ টাকা কমে সেই সোনার ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ৬৩৪ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরিতে খরচ হবে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ৩০ হাজার ১১২ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টাকায়।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ৪২৮ টাকা লেগেছে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৭ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৪১ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬৪ টাকা।
হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েঝে ২ হাজার ৪০৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ২ হাজার ২৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ১ হাজার ৯৭১ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরির দাম বেড়েছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর কমানো হয় ১ হাজার ২৪৮ টাকা।
১৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ৮৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ১৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১২ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ৮৭৮ টাকা।
এভাবে উঠানামার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছিল ২০২৪ সাল। গত বছরে মূল্যবান এই ধাতুর দর ৩৫ বার বেড়েছিল; কমেছিল ২৭ বার।
তবে নতুন বছরের শুরুতে সোনার দাম টানা বাড়ছিল। প্রথম বাড়ে ১৫ জানুয়ারি, এরপর টানা আট দফা বাড়ে। এরমধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেড়েছিল তিন বার। আর ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়ে পাঁচ বার।
এরপর বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারেও সোনার দর নিম্মমুখী হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেটের দাম কমে ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভরিতে ২ হাজার ৪০৩ টাকা কমানো হয়।
গত মার্চ মাসে দেশের বাজারে সোনার দাম দুই দফা কমেছে; বেড়েছে পাঁচ বার। আর চলতি এপ্রিল মাসে এক বার কমেছে; বেড়েছেও এক বার।
বৃহস্পতিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।
বিশ্ব বাজারেও রেকর্ড
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ৩ হাজার ৩৭ ডলার থেকে বেড়ে ৩ হাজার ১৬২ ডলারে উঠে গিয়েছিল। পরে সেই সোনার দর ৩ হাজার ডলারে নেমে আসে। গত কয়েক দিনে তা ফের বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৮৫ ডলার ৮৩ সেন্ট বেড়ে ৩ হাজার ১৬৮ ডলার ৪১ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
গত মঙ্গলবার রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ৯ ডলার ৪৩ সেন্ট।
কমেন্ট