৬৫৯০ টাকা বেড়ে ১০৩৮ টাকা কমল সোনার ভরি
সোমবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ৯০৪ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরিতে খরচ হবে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা।
দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমেছে। সোমবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকায় বিক্রি হবে। ভরিতে কমেছে ১ হাজার ৩৮ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছিল।
বৃহস্পতিবার সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দর ভরিতে ২ হাজার ৪০৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকায়। শুক্রবার থেকে কার্যকর হয় ওই দর।
দুই দিন না যেতেই শনিবার এই মাসের সোনার দর ভরিতে আরও ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে ভরি উঠেছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকায়। রবিবার থেকে কার্যকর হয় এই দর।
তিন দিনের ব্যবধানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৬ হাজার ৫৯০ টাকা বেড়েছিল। রবিবার রাতে এই মানের সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ৩৮ টাকা কমানো হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস।
ঈদের আগে কয়েক দফা বাড়ায় ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকায় ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কায় বিশ্ব বাজারে সোনার দরপতন হয়। তার সঙ্গে সমন্বয় করে গত ৮ এপ্রিল দেশের বাজারেও সব মানের সোনার দাম কমানো হয়।
ওই দিন ২২ ক্যারেট সোনার দর ভরিতে ১ হাজার ২৪৮ টাকা কমানো হয়। ভরি নামে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকায়। ৯ এপ্রিল (বুধবার) থেকে কার্যকর হয় ওই দর।
১০ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ছাড়া অন্য সব দেশের পাল্টা শুল্ক ৯০ দিন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্ববাজারে ফের চড়তে থাকে সোনার দর। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দর ৩ হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর আগে কখনই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর এত উচ্চতায় ওঠেনি।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়িয়ে চলেছে বাজুস।
ঈদের দুই দিন আগে ২৯ মার্চ ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৭৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তার তিন দিন আগে ২৬ মার্চ বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা।
চড়তে চড়তে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫২৫ টাকায় উঠেছিল। পরে অবশ্য কয়েক দফায় কমে ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
গত ১৬ মার্চ ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ভরি ওঠেছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৫ টাকায়। ১৭ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছিল ওই দর।
তার আগে তিন দফায় ৬ হাজার ১৮২ টাকা কমানোর পর গত ৪ মার্চ এক দিনেই ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৫৫৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ৫ মার্চ থেকে ওই দর কার্যকর হয়।
তিন দিনের ব্যবধানে ৮ মার্চ প্রতিভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮ টাকা কমানো হয়। ৯ মার্চ থেকে ওই দর কার্যকর হয়। ভরি নেমেছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬২ টাকায়। ১ মার্চ ২ হাজার ৬২৪ টাকা কমানোয় ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪৩ টাকায় নেমেছিল।
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই সময় দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছিল। টানা আট দফায় প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছিল ১৬ হাজার ২৩৬ টাকা।
এর পর ছয় দিনের ব্যবধানে তিন দফায় ৬ হাজার ১৮২ টাকা কমে সেই সোনার ভরি দেড় লাখ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ৯০৪ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরিতে খরচ হবে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫০৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩৭ টাকায়।
রবিবার পর্যন্ত এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১৩ হাজার ৯৯৩ টাকা লেগেছে। প্রতিভরিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৭৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লেগেছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪১ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ২৭১ টাকা।
হিসাব বলছে, এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ১ হাজার ৩৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৯৯১ টাকা। ১৮ ক্যারেটের কমেছে ৮৫১ টাকা।
সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরির দাম কমেছে ৭৩৫ টাকা।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর কমানো হয় ১ হাজার ২৪৮ টাকা।
১৯ ডিসেম্বর ২ হাজার ৮৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ১৫ ডিসেম্বর ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমানো হয়েছিল। ১২ ডিসেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ৮৭৮ টাকা।
এভাবে উঠানামার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়েছিল ২০২৪ সাল। গত বছরে মূল্যবান এই ধাতুর দর ৩৫ বার বেড়েছিল; কমেছিল ২৭ বার।
তবে ২০২৫ সালের শুরুতে সোনার দাম টানা বাড়ছিল। প্রথম বাড়ে ১৫ জানুয়ারি, এরপর টানা আট দফা বাড়ে। এরমধ্যে ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেড়েছিল তিন বার। আর ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়ে পাঁচ বার।
এর পর বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দেশের বাজারেও সোনার দর নিম্মমূখী হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ক্যারেটের দাম কমে ভরিতে ১ হাজার ১৫৫ টাকা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভরিতে ২ হাজার ৪০৩ টাকা কমানো হয়।
গত মার্চ মাসে দেশের বাজারে সোনার দাম দুই দফা কমেছে; বেড়েছে পাঁচ বার।
আর চলতি এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত দুই বার বেড়েছে; কমেছেও দুই বার।
রবিবার রাতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
রবিবার আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ ছিল। সোনার কোনো লেনদেন হয়নি।
২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ব বাজারে প্রতিআউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ৩ হাজার ৩৭ ডলার থেকে বেড়ে বেড়ে ৩ হাজার ১৬২ ডলারে উঠে গিয়েছিল।
পরে সেই সোনার দর ৩ হাজার ডলারের নিচে নেমে আসে। গত কয়েক দিনে তা টানা বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ২৩৮ ডলার ৮২ সেন্ট।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ১৬৮ ডলার ৪১ সেন্ট।
কমেন্ট