সয়াবিনের দাম বাড়ল ১৪ টাকা, কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৯ টাকা। খোলা পাম তেলও লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা করা হয়েছে।
দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বেড়েছে। এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৮৯ টাকায়। এত দিন যা ছিল ১৭৫ টাকা।
প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৯ টাকা। খোলা পাম তেলও লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা করা হয়েছে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা।
এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা; আগে যা ছিল ৮৫২ টাকা।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। সচিবালয়ে বৈঠকটি হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ এপ্রিল রবিবার থেকে এই দুটি ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ভোজ্যতেলের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার ইতিপূর্বে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানির ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়েও ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়, যার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে।”
সমিতি জানিয়েছে, এই মেয়াদ শেষে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে আদর্শ হারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত হচ্ছে। ফলে ভ্যাট সমন্বয়ের পর ভোজ্যতেলের নতুন দাম হওয়ার কথা লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা। তবে ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় ৮ শতাংশ হারে দাম সমন্বয় করে (বাড়িয়ে) তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হয়েছে ১৮৯ টাকা।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যা বললেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।
‘তবে এই মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক’ জানিয়ে তিনি বলেন, “বাজারে সরবরাহ ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। দাম সহনীয় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর ভ্যাটের এই হার কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।
পরে নভেম্বরে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়। ভ্যাট ছাড়ের এই মেয়াদ ছিল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন জানায়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এত দিন সরকার প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছে। রমজান পর্যন্ত গত কয়েক মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিচালনার ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে এভাবে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর, ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
“আমাদের হিসাবে (ফর্মুলা) তেলের দাম হওয়ার কথা প্রায় ১৯৭ টাকা। যদিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৯ টাকা।”
মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ভোক্তাপর্যায়ে আজ যে মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য হলাম, আমি মনে করছি, এই বাধ্যবাধকতা সাময়িক। অদূর ভবিষ্যতে এই দাম কমানো সম্ভব হবে।”
দেশে ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এর মধ্যে ৭ লাখ টন স্থানীয় শর্ষে থেকে আসে। সেই সঙ্গে নতুন করে ৬ লাখ টন রাইসব্র্যান বা কুঁড়ার তেল বাজারে আনতে পেরেছি আমরা। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সেনাকল্যাণ সংস্থার তেলও বাজারে আসছে।”
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আরও দুটি তেল কোম্পানি সম্প্রতি উৎপাদনে এসেছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আরও দু-তিনটি কোম্পানি ভোজ্যতেল উৎপাদনে আসবে। এভাবে বাজারে পরিসর বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এ ছাড়া গরমকালে বাজারে পাম তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।”
এর ফলে সয়াবিনের ওপরে চাপ কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সয়াবিনের দাম নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণ করতে সরকার একটু সময় নিয়ে ফেলেছে জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ভ্যাট অব্যাহতি আরেকটু দীর্ঘায়িত করা যেত কি না, সরকার সেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল, এ মুহূর্তে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া সরকারের জন্য খুবই সংবেদনশীল বিষয়।”
বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এ নিয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে বশিরউদ্দীন বলেন, চালের দাম বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়তি। আর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বোরো ধান বাজারে আসবে। মূলত চিকন চাল, যেটা মিনিকেট বা নাজির বলা হয়, সেটা বোরো ধান থেকে আসে।
সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই নতুন বোরো ধান বাজারে এলে চালের দাম আরও সহনীয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমেন্ট