সকালে বেড়ে বিকালেই কমল
সোনার নতুন এই দর বুধবার বিকাল ৪ টাকা ১৫ মিনিটে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে বলেও জানিয়েছে জুয়েলার্স সমিতি।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকায় উঠেছিল সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি। এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছিল ৫ হাজার ৩৪২ টাকা।
বুধবার সকাল থেকে সারা দেশে এই দামে সোনা বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু বিকালে দাম কমানোর ঘোষণা দেয় দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বিশ্ব বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বুধবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানায়, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৫ হাজার ৩৪২ টাকা কমেছে। এই মানের এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা লাগবে।
অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছে বলে জানায় বাজুস।
সোনার নতুন এই দর বুধবার বিকাল ৪ টাকা ১৫ মিনিটে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে বলেও জানিয়েছে জুয়েলার্স সমিতি।
বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মূল্যবান এই ধাতুর দর; গড়তে থাকে রেকর্ডের পর রেকর্ড।
সবশেষ মঙ্গলবার রাতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বাজুস জানায়, বুধবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) এক ভরি সোনা কিনতে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা লাগবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সোনার দর এত উচ্চতায় ওঠেনি। অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়।
একদিন আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ৪ হাজার ৭১২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকায়।
তার দুই দিন আগে শনিবার (১৯ এপ্রিল) বাড়ানো হয়েছিল ২ হাজার ৬২৪ টাকা; ভরি ওঠে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকায়। ১৬ এপ্রিল বুধবার এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ভরি ওঠে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ে ১৫ হাজার ৭১১ টাকা।
বুধবার বিকালে কার্যকর হওয়া নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিভরি ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকায়, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকায়।
বিকলে দাম কমার আগ পর্যন্ত হলমার্ক করা প্রতিভরি ২২ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া প্রতিভরি ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৫ টাকায়, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৩ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ২০ হাজার ৫১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিসাব বলছে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটে সোনার দাম কমেছে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটে ৫ হাজার ১৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম কমেছে ৩ হাজার ৭৩২ টাকা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত করলে সোনার দাম একটু কমে আবার বাড়তে শুরু করে।
কারণ, পাল্টা শুল্ক স্থগিত হলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক সব দেশের ওপর কার্যকর করা হয়।
বিশ্ব বাজারে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সোনার দাম প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) ৩ হাজার ৫০০ ডলার স্পর্শ করেছিল, যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার হুমকি থেকে সরে আসায় বুধবার সোনার দাম কমতে শুরু করে।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১২৭ ডলার ৪৮ সেন্ট কমে ৩ হাজার ২৮০ ডলার ৯ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ৪২৬ ডলার ৬৩ সেন্ট।
মূলত বিশ্ব বাজারে সোনার দামে পতন শুরু হওয়ায় দেশেও দাম কমিয়েছে জুয়েলার্স সমিতি। যদিও বাজুস বরাবরের মতো এবারও সরাসরি তা স্বীকার করেনি।
বুধবার বিকাল ৪টার দিকে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে নতুন দর কার্যকর হবে।
কমেন্ট