সোনার দাম আরও কমল, ভরি নামল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৩ টাকায়
মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৩ টাকায় বিক্রি হবে।
সোনার দাম আরও কমল। দুই দিনের ব্যবধানে সোমবার সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরি নেমেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৩ টাকায়।
মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে নতুন দর। অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছে।
১ হাজার ৫০ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরি নেমেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকায়।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম কমানো হচ্ছে। গত পাঁচ দিনে তিন দফায় ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৭ হাজার ৩২৬ টাকা কমানো হয়েছে।
গত ৮ মে কমানো হয় ৩ হাজার ১৩৮ টাকা। ১০ মে ১ হাজার ৫০ টাকা কমে। সবশেষ সোমবার ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়েছে।
এর আগে দুই দফায় ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ৮ হাজার ৯১২ টাকা কমানোর পর ৬ মে ২ হাজার ৩০৯ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকায়। এক দিন না যেতেই ৭ মে বাড়ানো হয় আরও ৩ হাজার ৬৬২ টাকা। ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকায়।
তার আগে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ এপ্রিল দেশের বাজারে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকায় উঠেছিল এই মানের সোনার ভরি; অন্যান্য মানের সোনার দরও রেকর্ড গড়েছিল। ওইদিন সকাল থেকে সারা দেশে রেকর্ড দরে বিক্রি হচ্ছিল সোনা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে সোনার দামের পতন হওয়ায় ওই দিন বিকালেই ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা কমানো হয়; ভরি নেমে আসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকায়। অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়।
বিশ্ববাজারে সোনার দর আরও কমায় দশ দিন পর গত ৩ মে এই সোনার দাম ভরিতে আরও ৩ হাজার ৫৭০ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৭ টাকায়।
কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ববাজার ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ৬ মে দেশের বাজারেও সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়। ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩০৯ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি উঠেছে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকায়।
এক দিন পর ৭ মে বাড়ানো হয় আরও ৩ হাজার ৬৬২ টাকা। ভরি উঠে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকায়। দুই দিনের ব্যবধানে ভরিতে বাড়ে ৫ হাজার ৯৭১ টাকা।
বাজুসের সহসভাপতি ও মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।
বাজুসের নতুন দাম অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৩ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৫ টাকায় বিক্রি হবে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৪৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩৯ টাকায় বিক্রি হব।
সোমবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭১১ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটে সোনার দাম কমেছে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম কমেছে ৩ হাজার ৯ টাকা। এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ২ হাজার ৫৬৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম কমেছে ২ হাজার ১৯৩ টাকা।
বাজুস সাধারণত রাত ৮টা-সাড়ে ৮টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।
তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে।
এ নিয়ে চলতি বছর ৩২ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো সোনার দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ২১ বার, আর কমেছে ১১ বার।
আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত করলে সোনার দাম একটু কমে আবার বাড়তে শুরু করে।
কারণ, পাল্টা শুল্ক স্থগিত হলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক সব দেশের ওপর কার্যকর করা হয়।
বিশ্ব বাজারে গত ২২ এপ্রিল সোনার দাম প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) ৩ হাজার ৫০০ ডলার স্পর্শ করেছিল, যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার হুমকি থেকে সরে আসায় সোনার দাম কমতে শুরু করে।
২৩ এপ্রিল রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ব বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ২৮০ ডলার ৯ সেন্ট। ৩ মে সেই সোনর দর আরও কমে ৩ হাজার ২৪১ ডলার ৩৬ সেন্টে নেমে আসে।
৫ মে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ৩১১ ডলার ৯৬ সেন্ট। ৬ মে রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ৩৯৫ ডলার ৮২ সেন্ট।
৮ মে রাত ৯টায় বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ৩২৬ ডলার ১৫ সেন্ট।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় সেই সোনার দাম ৮৯ ডলার ৩৫ সেন্ট কমে ৩ হাজার ২৩৬ ডলার ৯৫ সেন্টে নেমে এসেছে। শতাংশ হিসাবে কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
কমেন্ট