রবিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকায় বিক্রি হবে।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম উঠানামা করছে; একদিন বাড়ছে তো আরেক দিন কমছে।

শনিবার রাতে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৬৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরি উঠেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকায়।

অন্যান্য মানের সোনার দরও প্রায় একই হারে কমানো হয়েছে। রবিবার থেকে কার্যকর হবে নতুন দর।

দুই দিন আগে ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৪৫৩ টাকা কমানো হয়েছিল; ভরি নেমেছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকায়। শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছিল ওই দর।

তার দুই দিন আগে ১৩ মে (মঙ্গলবার) এই মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৫৬৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল; ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৬ টাকায়। বুধবার থেকে কার্যকর হয় ওই দর।

তার আগে পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিন দফায় এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৭ হাজার ৩২৬ টাকা কমানো হয়েছিল।

এর আগে দুই দফায় ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ৮ হাজার ৯১২ টাকা কমানোর পর ৬ মে ২ হাজার ৩০৯ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকায়। এক দিন না যেতেই ৭ মে বাড়ানো হয় আরও ৩ হাজার ৬৬২ টাকা। ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকায়।

অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২৪ এপ্রিল দেশের বাজারে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকায় উঠেছিল এই মানের সোনার ভরি; অন্যান্য মানের সোনার দরও রেকর্ড গড়েছিল। ওইদিন সকাল থেকে সারা দেশে রেকর্ড দরে বিক্রি হচ্ছিল সোনা।

কিন্তু বিশ্ববাজারে সোনার দামের পতন হওয়ায় ওই দিন বিকালেই ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা কমানো হয়; ভরি নেমে আসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকায়। অন্যান্য মানের সোনার দামও প্রায় একই হারে কমানো হয়।

বিশ্ববাজারে সোনার দর আরও কমায় দশ দিন পর গত ৩ মে এই সোনার দাম ভরিতে আরও ৩ হাজার ৫৭০ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৭ টাকায়।

কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ববাজার ফের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ৬ মে দেশের বাজারেও সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়। ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩০৯ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি উঠেছে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকায়।

এক দিন পর ৭ মে বাড়ানো হয় আরও ৩ হাজার ৬৬২ টাকা। ভরি উঠে প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকায়। দুই দিনের ব্যবধানে ভরিতে বাড়ে ৫ হাজার ৯৭১ টাকা।

শনিবার রাতে বাজুসের সহসভাপতি ও মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

বাজুসের নতুন দাম অনুযায়ী, রবিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৮ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৫ টাকায় বিক্রি হবে। ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭১৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ১২ হাজার ৯৭৭ টাকায় বিক্রি হব।

শনিবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৯৯ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনা কিনতে লেগেছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ টাকা।

আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ১২ হাজার ৩৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

হিসাব বলছে, দুই দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটে সোনার দাম বেড়েছে ১ হাজার ৩৬৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৩০৬ টাকা। এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ১০৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম বেড়েছে ৯৪৫ টাকা।

বাজুস সাধারণত রাত ৮টা-৯টার মধ্যে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।

তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে।

এ নিয়ে চলতি বছর ৩৫বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো সোনার দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ২৩ বার, আর কমেছে ১২ বার।

আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত করলে সোনার দাম একটু কমে আবার বাড়তে শুরু করে।

কারণ, পাল্টা শুল্ক স্থগিত হলেও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক সব দেশের ওপর কার্যকর করা হয়।

বিশ্ববাজারে গত ২২ এপ্রিল সোনার দাম প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) ৩ হাজার ৫০০ ডলার স্পর্শ করেছিল, যা ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে উঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন হচ্ছে মূল্যবান এই দাতুর দর।

শনিবার রাতে রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দর ছিল ৩ হাজার ২০১ ডলার ২২ সেন্ট।