রপ্তানি আয়ে ফের উল্লম্ফন, মে মাসে বেড়েছে ২৬.৬১ শতাংশ

রপ্তানি আয়ে ফের উল্লম্ফন, মে মাসে বেড়েছে ২৬.৬১ শতাংশ

১১ মাসে পোশাক রপ্তানি করে ৪২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।

নানা উদ্বেগ-উৎকষ্ঠার মধ্যেও রপ্তানি আয় ফের বাড়ছে। সবশেষ মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা।

এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর গত বছরের মে মাসের চেয়ে বেশি২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।

তবে মে মাসে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ কম আয় দেশে এসেছে। এই মাসে ৫১২ কোটি (৫.১২ বিলিয়ন) ডলারের লক্ষ্য ধরা ছিল। গত বছরের মে মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩৮৩ কোটি (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার (৫০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম।

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অন্য সব খাতের চিত্রই হতাশাজনক।

এই ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি করে ৪২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে জুলাই-মে সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-মে সময়ে অর্থাৎ বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসেই রপ্তানি আয় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে পণ্য রপ্তানি আয়ে রেকর্ড গড়তে চলেছে বাংলাদেশ। যদিও এর আগের দুই মাসে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দুশ্চিন্তা তৈরি করেছিল।

টানা দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) পিছিয়ে থাকার পর মে মাসের রপ্তানিতে আবার উল্লম্ফন হয়েছে। মার্চ মাসে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং এপ্রিলে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে যায় রপ্তানি। গতি ফিরেছে মে মাসে। প্রায় ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই মাসে।

ইপিবি মে মাসের রপ্তানির যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, এই মাসে ৪৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির এই পরিমাণ ২০২২ সালের মে মাসের রপ্তানি আয়ের (৩৮৩ কোটি ২ লাখ ডলার) চেয়ে ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

মে মাস মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পণ্য।

২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রপ্তানি আয় প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৩০৪ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু আয় হয় ৫ হাজার ২০৮ বিলিয়ন। সেই রেকর্ডে ভর করে চলতি অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

তবু লক্ষ পূরণ হয়নি

বড় প্রবৃদ্ধি হলেও মে মাসের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি। এ মাসে ৫১২ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। পরিকল্পনার চেয়ে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ পিছিয়ে আছে আয়।

গত নভেম্বর থেকে টানা তিন মাস ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এরপর জানুয়ারিতে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪৬৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। মোট অংক ডিসেম্বরের তুলনায় কমলেও ওই দুই মাসে প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।

কিন্তু মার্চ মাসে তাতে ছেদ পড়ে। আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২.৪৯ শতাংশ কম আয় করে বাংলাদেশ। রপ্তানি হয় ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

এপ্রিলের ধাক্কা আরও বড় হয়। এই মাসে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় তা ছিল ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

অন্যান্য খাত

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য সব খাতেই রপ্তানি আয় কমেছে। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে জুলাই-মে সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশের মতো। ওষুধ রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমেছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল থেকে কমেছে ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ।

স্পেশালাইজড টেক্সটাইল থেকে আয় কমেছে ১৪ শতাংশ। বাইসাইকেল কমেছে ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ১৪ শতাংশ।

দুই দিন আগেও রপ্তানি খাত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান।

গত বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুক্রবার বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিজিএমইএ।

সংবাদ সম্মেলনে উম্মা প্রকাশ করে ফারুক হাসান বলেন, “এবারের বাজেটে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ‘সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কমতে থাকা রপ্তানি চাহিদার বিপরীতে আমরা যেসব প্রনোদনা চেয়েছিলাম, কর ও শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছিলান, বাজেটে সেগুলোর প্রতিফলন হয়নি।”

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে পোশাক পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, “ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি অফিসিয়ালি আমাদের জানিয়ে দিয়েছে যে দেশটি মন্দার কবলে পড়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থাও সঙ্গিন। যুক্তরাষ্ট্রেও কমেছে পোশাক রপ্তানি। ২০২৩ সালে বিশ্ববাজার ছোট হয়ে যাবে।”

এ পরিস্থিতিতে ‘নন-কটন’পোশাকে ভালো সম্ভাবনা দেখছেন জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিশ্বের মোট পোশাক বাজারের ৭৫ শতাংশই নন-কটন । কিন্তু বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ২৬ শতাংশ নন-কটন।

“নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানি মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ বিশেষ প্রনোদনা দেওয়ার অনুরোধ করেছিল বিজিএমইএ, যা বজেটে প্রতিফলিত হয়নি।”

পোশাক শিল্পের আবর্জনা বা ঝুট পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, “এখানে বিনিয়োগ আনতে আমাদের প্রস্তাব ছিল রিসাইক্লিং শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া, পণ্য ও সেবাকে শুল্ক ও ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার। তবে বাজেটে এর প্রতিফলিত হয়নি।”

 

পাটের ‘সোনালি দিনের’ আশায় গুড়েবালি পরবর্তী

পাটের ‘সোনালি দিনের’ আশায় গুড়েবালি

কমেন্ট